"জীবের প্রতি ভালোবাসা" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
জীবের প্রতি ভালোবাসা
শিশুকাল থেকেই পশু পাখির প্রতি রাতুলের প্রচণ্ড দুর্বলতা। কখনও সে কোনো পশু
পাখিকে আঘাত করেনি। কেউ করলেও ওর ভালো লাগেনা। পশুদের মধ্যে বিড়াল রাতুলের
ভীষণ পছন্দ৷ তাই বিড়াল পোষা রাতুলের একটি অন্যতম শখ। বন্ধুর বাড়ি থেকে সে
একটি বিড়াল সংগ্রহ করে পোষার জন্যে। বিড়ালটি দেখতে খুব সুন্দর। রং ধবধবে
সাদা। বিড়ালটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাতুলের সাথে বন্ধুর মতো হয়ে গেছে বলে
রাতুল তার নাম রেখেছে মিশুক। সে সব সময় রাতুলের সাথে সাথে থাকে। রাতেও মিশুক
রাতুলের সাথে এক বিছানায় ঘুমায়। রাতুল বিড়ালকে অনেক আদর করে খাওয়ায়। অনেক
সময় নিজে না খেয়ে সে বিড়ালকে মাছের বড় বড় মাথা খাওয়ায়। পরিচ্ছন্ন রাখার
জন্য প্রতিদিন রাতুল মিশুককে গোসল করায়। প্রতিদিন বিকেলে সাথে নিয়ে বাড়ির
বাইরে ঘুরতে যায়। একদিন হঠাৎ একটি কুকুর রাস্তায় মিশুককে দেখতে পায় এবং
মিশুককে তাড়া করে। কুকুরের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিড়ালটি দিগ্বিদিক না ভাবে
দৌড়াতে থাকে। মিশুককে বাঁচাতে রাতুলও দৌড়ায়। এক সময় কুকুরটি মিশুককে ধরে
ফেলে এবং কামড়াতে আরম্ভ করে। মিশুক কিছুতেই নিজেকে কুকুরের হাত থেকে ছাড়াতে
পারে না। পরে রাতুল এসে কুকুরকে লাঠি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। ততক্ষণে মিশুকের
রক্তাক্ত অবস্থা। রাতুল তাড়াতাড়ি মিশুককে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ি এলো। তারপর
রক্ত মুছে বিড়ালের ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগিয়ে দিল। কিছুদিন পরে মিশুকের
ক্ষতস্থানে ঘা দেখা দেয়। আস্তে আস্তে মিশুক খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়। ঘা টাও
বাড়তে থাকে। তখন বাড়ির সবাই রাতুলকে বলে মিশুককে বাড়ির বাইরে ফেলে দিয়ে
আসতে। কিন্তু রাতুল কোনোভাবেই বিড়ালটিকে ফেলে দিতে রাজি হয় না। এ ব্যাপারে
রাতুল কারও কথা না শুনে বিড়ালকে নিজের কাছেই রেখে দেয়। তার কিছুদিন পরে হঠাৎ
করে বিড়ালটি উধাও হয়ে যায় কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
রাতুল পাগলের মতো সবখানে মিশুককে খুঁজতে থাকে। অবশেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর
মিশুকের সন্ধান পাওয়া গেল পাশের বাড়ির এক চুলার ভেতরে। আগুনে ঝলসে গেছে
মিশুকের সারা শরীর। শখের প্রিয় বিড়ালের এই অবস্থা দেখে রাতুলের চোখ ভিজে গেল।
মিশুকের এমন করুণ পরিণতি সহজভাবে মানতে পারে না রাতুল। অনেক কষ্ট নিয়ে রাতুল
মিশুককে ছাড়াই বাড়ি ফিরে আসে।
একই খুদে গল্প আবার সংগ্রহ করে দেওয়া হলো
বিষণ্ণ একটা বিকেল কাটে রহমত মিয়ার। তিনি ভাবতে পারেন না, এখন তার কী করা উচিত!
অনেক স্বপ্ন ছিল তার। একটা ছোটখাটো কাজ করেন রহমত মিয়া। বাড়ির পাশের গ্যারেজে
দিনচুক্তিতে কাজ করেন তিনি। সুন্দর একটা সংসারের আশায় নিরলস পরিশ্রম করেন তিনি।
কিন্তু মানুষ সবসময় যেমনটা ভাবে তেমনটা হয় না। তবে রহমত মিয়ার সুখের সংসার
হয়েছিল। কিন্তু সন্তান জন্ম দেবার সময় মৃত্যু হয় তার স্ত্রীর। স্ত্রীর
মৃত্যুতে একেবারে ভেঙে পড়েন তিনি। সবাই তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করার পরামর্শ
দিয়েছিল। কিন্তু রহমত মিয়া তার ছোট্ট মেয়ে সাদিয়াকে বুকে নিয়ে সারাজীন
কাটিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। সাদিয়া ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে। এখন সে স্কুলে
যায়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। অমায়িক ব্যবহার ও কথাবার্তার জন্য স্কুলের সবাই
সাদিয়াকে খুব পছন্দ করে। সাদিয়ার বাবা রহমত মিয়া রোজ তাকে স্কুলে নিয়ে যান,
নিয়ে আসেন। একসাথে বসে ভাত খাইয়ে দেন।ঘুমের সময় মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
মায়ের অভাব কখনো বুঝতে দেন না সাদিয়াকে। একদিন শীতের রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে
যায় সাদিয়ার। অদ্ভুত রকমের একটা শব্দ শুনতে পায় সে। সে ভাবতে থাকে শব্দটা
কোথা থেকে আসছে। জানালার পাশে গিয়ে সে দেখতে পায় কয়েকটি কুকুরছানা শীতে
কাতরাচ্ছে। সাদিয়া তাদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। শীতকে উপেক্ষা করে সাদিয়া
বাইরে বের হয়ে আসে। ঝরাপাতার ওপর পা রেখে মর্মর শব্দধ্বনি তুলে এগিয়ে যায়
কুকুর ছানাগুলোর দিকে।. ঘরের পুরনো কাঁথা দিয়ে সে কুকুরছানাগুলো ঢেকে দিয়ে
আসে। কুকুরছানাগুলো প্রবল শীতের হাত থেকে রেহাই পায়। সকালে সাদিয়া আবার
কুকুরছানাগুলো দেখতে যায়। ক্ষুধায় কাতর কুকুরছানাগুলো দুধ গরম করে এনে খাওয়ায়
সে। বাড়ির পাশের সবাই তার এ সব কাজ-কারবার দেখে হাসাহাসি করে। কিন্তু সাদিয়া
তবুও পিছু হটে না। তার চেষ্টায় কুকুরছানাগুলো বেঁচে ওঠে। সবাইকে তখন সাদিয়া
বলে, স্কুলে পড়নি 'জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।'