‘যুদ্ধে যাওয়া’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা কর।
যুদ্ধে যাওয়া
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সে
সময় নির্বিচারে হত্যা করেছিল অনেক মানুষকে। যারা ছিল নিরপরাধ। বাঙালি
হওয়াটাই ছিল যাদের একমাত্র অপরাধ। কিন্তু বাঙালিরা থেকে থাকেনি। অস্ত্র হাতে
ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে এমনই একটি গ্রাম ছিল মাধবদী। যে গ্রামের
তরুণ যুবকসহ প্রায় সকলেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই গ্রামেরই একজন যুবক
সামাদ। যুদ্ধের সময় পড়তো দশম শ্রেণিতে। তখন তার বয়স সবে ১৫ কিংবা ১৬। এই
১৫ কিংবা ১৬ বছরের জীবনে সে দেখে ফেলেছে যুদ্ধের নৃশংসতা। দেখেছে গ্রামের
সাধারণ মানুষের উপর কীভাবে হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেই দৃশ্য।
দেখেছে গ্রামের মেয়েদের বউদের অবাধে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এসব আর্তনাদ আর সহ্য
করতে পারছিল না সামাদ। তাই সে ঠিক করলো যুদ্ধে যাবে। মাকে লুকিয়েই যুদ্ধের
যাওয়ার প্রস্তুতি নিল সে। কারণ মা জানলে যে যেতে দেবে না। লুকিয়েই গ্রামের
অন্যান্য ছেলের সাথে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিল। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে নিতে
লাগলো প্রস্তুতি। বন্দুক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়লো দেশ স্বাধীনের লক্ষ্যে।
হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে।
বিপুল উত্তেজনা কাজ করছে কারণ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণ হতে
যাচ্ছে এটি। অন্যদিকে মনে মনে একটু একটু ভয়ও কাজ করছে। যদি পাকবাহিনীর হাতে
ধরা পড়ে নির্ঘাত মৃত্যু। কিন্তু ভয় পেলে চলবে না। দেশকে যে মুক্ত করতেই
হবে। ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে সে ভাবলো অনেকদিন মায়ের হাতে ভাত
খায়নি। যুদ্ধ শেষ হলেই মায়ের কাছে যাবে। মায়ের হাতের ভাত খাবে। বোন স্কুলে
যাবে, পরিবারের সবাই একসাথে হাসবে। এগুলো ভাবতে ভাবতেই ক্যাম্পের কাছাকাছি
চলে এল, ছুঁড়ে মারলো হাতে থাকা গ্রেনেড । যেভাবেই হোক এই পদক্ষেপে তাদের
জয়ী হতেই হবে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। ধরা পড়ে গেল হানাদারবাহিনীর
হাতে। এরপর সামাদের খোঁজ আর পাওয়া গেল না। দিন দশেক পরে সামাদের লাশ ভাসতে
দেখা গেল নদীর তীরে।