'জনপ্রতিনিধি' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখো :
জনপ্রতিনিধি
মানুষের সেবা করার মধ্য দিয়ে নিজেকে অমর করার স্বপ্ন কামালের অনেক দিনের।
সামান্য একজন গৃহস্থের বড় সন্তান কামাল। দুই ভাই আর তিন বোনের সংসার
পরিচালনার ভার একা বাবার পক্ষে চালানো দুঃসাধ্য বলে কামালকেও ধরতে হয় সংসারের
হাল। পাঁচ ভাইবোনের লেখাপড়া-খাওয়া-পরাসহ অন্যান্য চাহিদা মেটাতে শুধু বিঘা
চারেক জমির চাষাবাদের ওপরই নির্ভর করলে চলে না। তাই কামালকে বাড়তি
আয়-রোজগারের জন্য কলেজের লেখাপড়া ছেড়ে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষের ব্যবসা শুরু
করতে হয়। ভাড়ায় চালিত জমিচাষের ওই ট্রাক্টর তখন গোটা গ্রামের একমাত্র ভরসা
হওয়ায় বসে থাকা লাগত না একটি দিনও। দিনকে দিন চাহিদা ও কর্মপরিধি বাড়ার
কারণে একজন সহযোগী অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে কামালের। কামাল বাল্যবন্ধু অলিকে তার
ট্রাক্টরের সহযোগী হিসেবে নিল। দুবন্ধু মিলেমিশে সারাদিনে কান্তার বিলে বিঘের
পর বিঘে জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে।
সৎ ও নির্লোভ হওয়ার ফলস্বরূপ অর্থনৈতিকভাবেও কামাল স্বাবলম্বী ও সচ্ছল হয়ে
ওঠে। দুভাইকে শহরে রেখে লেখাপড়া শেখায় এবং বোনদের সুপাত্রস্থ করে। গ্রামের
উন্নয়ন আলোচনা ও বিচার সালিশে কামালকেও এখন আমন্ত্রণ জানানো হয়। স্থির
বিবেচনা-বুদ্ধি দিয়ে সে মীমাংসার যেসব প্রস্তাব পেশ করে সেসব সর্বজনগ্রহণীয়
হয়ে ওঠে প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই। ধীরে ধীরে কমবয়সী হওয়া সত্ত্বেও বাস্তব
অভিজ্ঞতার কারণে যেকোনো বিচার-সালিশে কামাল অনিবার্য ব্যক্তি হয়ে ওঠে। গ্রামের
সাধারণ মানুষদের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও অনুরোধে কামাল চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে মনস্থির করে। কেননা সে ভাবে মানবসেবায় নিজেকে
নিয়োজিত রাখতে ও খেটে খাওয়া সাদাসিধে সরল মানুষদের অধিকার আদায় ও চাহিদা
পূরণের জন্য জনপ্রতিনিধি না হয়ে উপায় নেই। সৎভাবে নির্বাচনী প্রচারণা ও
নগণ্যসংখ্যক জনসভা জনসংযোগ করেও শুধু চারিত্রিক সদ্গুণ ও তরুণদের মুখপাত্র
হিসেবে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে কামাল। কামালের এককালীন নাম হয়ে যায় 'কামাল
চেয়ারম্যান'। গোটা ইউনিয়নের সকলের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে কামাল
চেয়াম্যানের সুনাম ও সুখ্যাতি। ভালুকগাছী ইউনিয়নের ৮টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ
আনয়ন, ২০ কি.মি. পাকা রাস্তার কাজ সম্পাদন এবং ইউপি কার্যালয়ের জন্য ভিন্ন
ভিন্ন জায়গা বরাদ্দসহ সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমূল অগ্রগতি সাধিত হয়
কামাল চেয়ারম্যানের চার বছর মেয়াদকালে। জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হবার সাথে সাথে
সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের আহ্বান ও আন্তরিক অনুরোধেই উপজেলা পরিষদের মতো দীর্ঘ
পরিসরের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বসে কামাল চেয়ারম্যান। আপাতদৃষ্টিতে
হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে বিপুল ব্যবধানে পরাজয়ের সমূহ
সম্ভাবনা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত সকল সমীকরণকে ভুল প্রমাণিত করে
শুধু মানুষের ভালোবাসা ও অকুণ্ঠ সমর্থনে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হয় এক সময়কার ট্রাক্টরচালক কামাল।
এভাবেই প্রতিপত্তির চেয়ে মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যে বড় তাই যেন প্রমাণ
করল কামাল চেয়ারম্যান তার জীবনে। ছোট দুভাইকে মানবসেবায় উদ্বুদ্ধ করেছে কামাল
চেয়ারম্যান। তাইতো মেজভাই অমল কলেজের বাংলার প্রভাষক আর ছোট ভাই তমাল স্থানীয়
উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাসেবা প্রদানে সফল। এভাবেই কামাল
চেয়ারম্যানের আদর্শে প্রজ্বলিত শিখায় আলোকিত যেন গোটা উপজেলার আপামর
জনসাধারণ।
🥰🥰সত্তিকারের প্রতিনিধি হলে এমন হওয়াই উচিত
ReplyDelete