খুদে গল্প : যন্ত্রণা

'যন্ত্রণা' বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :

যন্ত্রণা

বাবাকে সেবা করতে না পারার যন্ত্রণায় প্রতিদিন দগ্ধ হয় তামিম। সে তার বাবার একমাত্র ছেলে ছিল। অনেক কষ্ট করে তাকে লেখাপড়া করিয়েছে তার বাবা। সে এখন ঢাকায় ছোট একটি চাকরি করে। বাবাও একটি বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। ছয় মাস আগে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। গলা দিয়ে কাশির সাথে রক্ত পড়ে। পেটের পীড়াটাও বেশ। যত বড় বড় ডাক্তার আছে সবাইকেই দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো উন্নতি নেই। প্রতিনিয়ত ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে তার শরীর।

তামিমের ব্যাংক ব্যালেন্স তেমন ছিল না। চাকরিতে সবেমাত্র যোগদান করেছে। সামান্য বেতনে পরিবারের খরচই মেটে না। তার ওপর বাবার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। কী করবে ভেবে পায় না তামিম। এক বন্ধুর পরামর্শে বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের আবেদন করে। কিছু টাকা সাহায্যও পায়। বাবার কয়েকটি মেডিকেল টেস্ট করতে বেশ কিছু টাকা ব্যয় হয়। বাড়ির যেটুকু সম্পদ ছিল তা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তারপরও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ হয় না। তার এক কাছের বন্ধু পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়। সে কিছুটা ভরসা পায়।

তামিম একটি মেয়েকে পছন্দ করতো। মেয়েটি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তার পরীক্ষার ফি বাবদ বেশ কিছু টাকা প্রয়োজন। কোন কিছু না ভেবেই বাবার চিকিৎসার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা তাকে দিয়ে দেয়। এদিকে ডাক্তারি রিপোর্টে ধরা পড়ে তামিমের বাবার ক্যান্সার হয়েছে। ক্যামো থেরাপি দিতে হবে। দামি কিছু ওষুধ কিনতে হবে। বাবার পাশে একজন লোক সেবা করার জন্যও থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাবাকে হাসপাতালে একা ফেলে মেয়েটির বিশেষ কাজে ঢাকার বাইরে যায় তামিম। যথা সময়ে চিকিৎসা হয় না তার বাবার ৷ প্রয়োজনীয় সেবা পায় না তার বাবা। কিছুদিন না যেতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। শোকার্ত তামিম বাবার দাফন কাজ সম্পন্ন করে ঢাকায় ফেরে। ইতোমধ্যেই তার সেই পছন্দের মানুষটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি হয়। মেয়েটি তামিমকে আর নিজের জন্য উপযুক্ত মনে করে না। সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ফোন করলে বকাবকি ও অপমান করে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তামিম। যার জন্য নিজের বাবার সেবা ঠিকভাবে করতে পারেনি, সেও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। নিজেকে বড় অপরাধী ভাবে সে। বাবার সেবা করতে না পারার যন্ত্রণা তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। নিজেকে বড় স্বার্থপর মনে হয় তার।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post