'কালের সাক্ষী' বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :
কালের সাক্ষী
স্টেশনের প্লাটফর্মে ছেলেটিকে ঘুমাতে দেখে চমকে উঠল জিনিয়া। সে ভাবল ছেলেটি
এখানে কেন। গায়ে কোনো জামা নেই ছেলেটির। পরনে পুরনো ছেড়া একটি লুঙ্গি। রোগা
শরীর। না খেয়ে খেয়ে পেট পিঠের সাথে লেগে যাওয়ার উপক্রম। মাথায় হাত দিয়ে
জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে জিনিয়া। চোখগুলো যেন মেলতে পারছিল না। কথা বলার
শক্তিটাও মনে হয় নেই। হাত ধরে টেনে বসায় ছেলেটিকে।
জিনিয়ার গ্রামের স্কুলের কেরানি ছিলেন রকিব মিয়া। তার তিন ছেলে। বড় ছেলে
পানিতে পড়ে মারা যায়। মেঝ ছেলে রিক্শা চালাতো। কিছুদিন না যেতেই একটি
দুর্ঘটনায় সেও মারা যায়। ছোট ছেলেটি বাবার সাথেই স্কুলের টেবিল চেয়ার মোছার
কাজ করতো। জিনিয়াদের বাড়িতে প্রায়ই সে আসতো। ঘরের টুকটাক কাজ করে দিত। খুব আদর
আহ্লাদ পেত সবার কাছে। কিছুদিন আগে স্কুলের কেরানির চাকুরিটি চলে যায়। স্কুলের
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির এক নিকট আত্মীয়কে সে পদে নিযুক্ত করে। রকিব মিয়াকে
ছাটাই করা হয়। চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্ত্রী তার আগেই মারা গেছে। ছোট
ছেলেটি আর তিনি কি করে চলবেন তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না। বয়স বেড়ে যাওয়ায় কোন
ভারি কাজও তিনি করতে পারেন না। তারপরও কাজের জন্য এখানে সেখানে ঘুরেছেন। কিন্তু
কেউ তাকে কাজে নয় না। চিন্তায় রোগগ্রস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বিনা চিকিৎসায়
বিছানায় ছটফট করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ছোট ছেলেটি একে একে
সকলকে হারিয়ে কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকে। কোথাও তাঁর ঠাই হয় না। কাজ দেয়ার কথা
বলে গ্রামের এক লোক তাকে শহরে নিয়ে আসে। স্টেশনে কুলির কাজ করে সে। প্রতিদিন যা
উপার্জন করে তার সামান্য রেখে পুরোটাই নিয়ে যান সেই লোকটি কখনো খাবার জোটে, আবার
কখনো জোটে না। এভাবেই চলছিল তার জীবনযুদ্ধ।
জিনিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তার পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকে। প্লাটফর্মে
ছেলেটির এমন নিদারুণ কাহিনি তাকে হতবাক করে। ছেলেটিকে সাথে করে বাসায় নিয়ে আসে
জিনিয়া।