“খাদ্যে ভেজাল : তার কারণ ও প্রতিকার” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে
একটি ভাষণ তৈরি কর।
খাদ্যে ভেজাল : তার কারণ ও প্রতিকার
“খাদ্যে ভেজাল : তার কারণ ও প্রতিকার” শীর্ষক আলোচনা সভা-২০২১-এর শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত সুধীসমাজ আমার আন্তরিক প্রীতি ও
অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
খাদা মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম। মানুষ খাওয়ার জন্য না- একথা সত্য
হলেও বেঁচে থাকতে হলে খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে তা হতে হবে ভেজালমুক্ত।
তাই আমাদের একটি স্লোগান হোক “জীবনের প্রয়োজনে চাই ভেজালমুক্ত খাদ্য।”
প্রিয় সুধী,
আমাদের এই সমাজে সৎ মানুষ যেমন আছে, তেমনি অসৎ মানুষও আছে। বর্তমান সময়ে অসৎ
মানুষের সংখ্যা এবং তাদের দৌরাত্মা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তাদের প্রচণ্ড
প্রতাপে সমাজব্যবস্থার রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকেছে বিষবাষ্প। বর্তমান সময়ে
বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে ‘খাদ্যে ভেজাল’ একটি অন্যতম সমস্যা। একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ ও রাতারাতি অধিক মুনাফা অর্জনের
উদ্দেশ্যে খাদ্যকে অখাদ্যে পরিণত করে যাচ্ছে। তারা খাদ্যকে মুখরোচক করতে গিয়ে
বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে, ফলে যার বিরূপ
প্রভাব পড়ে দীর্ঘদিন পরে। যেমন— ফাস্ট ফুড নামে যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে
শুরু হয়েছে তার প্রভাব পড়ছে শিশু ও তরুণদের ওপরে। তারা এগুলো সুস্বাদু খাবার হিসেবে খেলেও পরবর্তীতে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের
কোমল পানীয় একই ধরনের সমস্যা তৈরি করছে।
প্রিয় সুধীবৃন্দ,
আমরা বাজারে মাছ কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ি, মাছটি হয়তো বিষাক্ত ফরমালিন
দিয়ে ভাজা করে রাখা হয়েছে এই সন্দেহে। কাঁচা তরকারির ক্ষেত্রে একই সমস্যা,
বিভিন্ন সুস্বাদু ফল পাকানো হয় বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে মিষ্টিতে ব্যবহার
করা হয় গাড়িতে ব্যবহারের জ্বালানি, খাবার তেলে বিদ্যুৎ প্লান্টে ব্যবহারের
রাসায়নিক পদার্থ। সর্বত্র ভেজাল। এমনকি জীবন রক্ষায় যে ওষুধ তাও ভেজালের
আওতামুক্ত নয়। খাদ্যে ভেজালের যত সমস্যা তা থেকে উত্তরণের জন্য এখন থেকেই
আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। সেই লক্ষ্যে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে
পারে--
প্রথমত, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বড় বড় হাটবাজারে পরীক্ষাগার স্থাপন।
দ্বিতীয়ত, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র অভিযান পরিচালনা।
তৃতীয়ত, বাণিজ্যিক প্রয়োজনে যে সকল প্রতিষ্ঠান খাদ্য উৎপাদন করে তাদের
প্রতি BSTI-এর আরও সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
চতুর্থত, BSTI-কে আরও ক্ষমতা প্রদান করা।
পঞ্চমত, ভেজাল প্রমাণের সাথে সাথে প্রশাসনিকভাবে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং
ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর
বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।
ষষ্ঠত, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভেজালের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার অভিযান,
সভা ও সেমিনার করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যালি,
সচেতনতা অভিযান প্রভৃতি পরিচালনা করা।
প্রিয় বন্ধুগণ!
মাঝে মধ্যে দু-একটি সভা আর বক্তব্য দিলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ মনে করলে
আমাদের এ সভার ফলাফল হবে শূন্য। আমাদের আরও সংগঠিত হতে হবে। দেশের সর্বত্র
ছড়িয়ে পড়ে ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ এবং বৃহৎভাবে রাষ্ট্রীয়
ক্ষেত্রে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই আমাদের এ জাতীয়
সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সবার সুস্থ দেহ ও সুন্দর জীবন কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
I love you
ReplyDelete