‘একজন কর্মজীবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
একজন কর্মজীবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন
বয়স অনুযায়ী মাজেদ গায়ে পায়ে একটু লম্বা, স্বাস্থ্য ভালো। অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার
পর থেকেই সে পারভেজ চাচার কলে বিকেলে ৪ ঘন্টা কাজ করে। দুটি মেশিনের একটিতে
চাল, গম ভাঙানো হয় আর অন্যটিতে মসলা। মাজেদের কাজ ছিল কে, কতটুকু, কী নিয়ে
এসেছে তার হিসাব রাখা। স্কুল থেকে সোজা বাসায় যায়। ভাত খেয়ে তারপর কলে আসে।
পারভেজ চাচা অনেকদিন জানতই না যে মাজেদ স্কুলে পড়ে। ওকে খেটে খেতে হয়।
বাবা-মাকে দেখতে হয়, স্কুলে খরচ দিতে হয়। এসএসসি পরীক্ষার আগে যখন মাস কয়েক
ছুটি চাইল তখন পারভেজ চাচা জানল মাজেদ ভালো ছাত্র, সে ম্যাট্রিক পরীক্ষা
দিচ্ছে। চাচা খুশি হয়ে দুশোটাকা দিয়েছিল। পরীক্ষা শেষে মাজেদ কাজে যোগ দিলে তার
চাচা তার বেতন দ্বিগুণ করে দেয়। আর বলল, তুই আমার এখানে কাজ করে কলেজে,
ইউনিভার্সিটিতে পড়বি, ঠিক আছে? এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করলে চাচা সবাইকে
মিষ্টি খাওয়ালো আর মাজেদের হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বলল, যাওয়ার সময় মিষ্টি কিনে
নিয়ে যাবি আর ভাই ভাবিরে আমার সালাম দিবি। পারভেজ চাচা মাজেদকে সাথে করে নিয়ে
কলেজে ভর্তি করে দিলেন। প্রিন্সিপাল স্যার কে বললেন, স্যার ও আমার কলে ৪ ঘন্টা
কাজ করে বাকি সময় পড়ালেখা করে। ওকে একটু দেখবেন স্যার। প্রিন্সিপাল স্যার
মাজেদের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলেন। সে বলেছে, সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার কথা।
স্যার মাজেদের পিঠ চাপড়ে বললেন, তুমি অবশ্যই গভর্নমেন্ট অফিসার হবে। তারপর
টিচার্স রুমে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন, ও একজন কর্মজীবী শিক্ষার্থী। আপনারা ওকে
সাহায্য করবেন। এভাবেই মাজেদের পরিচয় হয়ে গেল, কর্মজীবী শিক্ষার্থী হিসেবে।
প্রতিমাসে বাবা মাকে দেখতে গিয়ে পারভেজ চাচাকেও দেখে আসে মাজেদ। তাঁর কাছে
মাজেদ এখনো কর্মজীবী শিক্ষার্থী।