লালন আখড়া ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
আমরা পাঁচ বন্ধু লালনগীতি পছন্দ করি। রেডিও বা টেলিভিশনে লালন শাহের গান শুনি,
নিজেরা কলেজের বা এলাকার অনুষ্ঠানে গায় এবং তাঁর গানের কথা নিয়ে আলোচনা করি।
লালন আখড়ায় যাওয়ার সাধ আমার অনেক দিনের। আব্বার এক বন্ধু লালন একাডেমির
কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তারও আমন্ত্রণেই আমরা পৌঁছে গেলাম
ছেঁউড়িয়ায়-লালন উৎসবে। বাস থেকে নামতেই চাচা আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে তার
বাসায় নিয়ে গেলেন। আমরা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে গাইড এর সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম।
নানা বয়সী বাউল সাধক পথের দু'পাশে আস্তানা গেড়েছে। আধ্যাত্মিক সাধক লালন শাহ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে আশ্রয় লাভ করেন এবং এখানে আখড়া তৈরি করেন।
এই আখড়াই তিনি শিশুদের শিক্ষা দিতেন। ১৮৯০ সালের ১৭ ই অক্টোবর ১১৬ বছর বয়সে
মৃত্যুর পর তার সমাধিস্থলে মিলনক্ষেত্র (আখড়া) গড়ে ওঠে। গেট দিয়ে ঢুকে দুপাশের
সবুজ ঘাসে ছাওয়া সারি সারি গাছের বাগান। বাম পাশে বিশাল গম্বুজে তার সমাধি ঘিরে
সারি সারি শিষ্যের কবর। বেদীতে ফুল আর আগরবাতি সুগন্ধে একটি বিশেষ আধ্যাত্বিক
পরিবেশ বজায় রয়েছে। মাজারের পাশে লালন মিউজিয়াম একাডেমি। নিচের তলা উন্মুক্ত।
লালন অনুসারীরা সেখানে একের পর এক লালন গীতিতে মুগ্ধ করে রেখেছেন স্রোতমন্ডলীকে।
কিছুক্ষণ এক কিশোরীর সুললিত কন্ঠে গান শুনে মিউজিয়াম দেখতে গেলাম। এখানে রয়েছে
লালনের ঘরের একটি দরজা, তার বসার জল চৌকি, ভক্তদের ঘটি-বাটি ও বেশ কিছু দুর্লভ
ছবি। ছবিগুলো দেখে লালনের পরিচিতি ও সমৃদ্ধির সম্পর্কে ধারণা পেলাম। গাইডের কাছে
জানলাম, তার মৃত্যুর কদিন পর মীর মশারফ হোসেন সম্পাদিত পাক্ষিক পত্রিকা
'হিতকারী' তে লালনকে 'মহাত্মা' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মাজার থেকে বেরিয়ে
দেখলাম দু'পাশে বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্রের ও দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র।
দোকান পেরিয়ে দেয়াল ঘেরা বিশাল মাঠ, মাঠের ৩ দিক ঘিরে বাউলদের আধ্যাত্মিক গান
চলছে। গেট সোজা লালনের আবক্ষ ভাস্কর্য। বাম দিকে উঁচু সুসজ্জিত স্থায়ী মঞ্চ।
এখানে নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পালন করা হবে লালনের মৃত্যুবার্ষিকী। পাশ দিয়ে
বয়ে গেছে কালিগঙ্গা নদী। একাডেমিক ভবনের অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভায় যোগ দিলাম।
লালন গবেষকদের বক্তব্যে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম। তিন দিনব্যাপী
বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হলনা আমাদের। এক রাত থেকে পরদিন লালনের উপর
কিছু বই কিনে বাসে উঠে পড়লাম। চাচা আমাদের বিদায় জানালেন।