‘লোভের পরিণাম' শিরোনামে ক্ষুদেগল্প তৈরি করো।
লোভের পরিণাম
লেখাপড়া সমাপ্ত করে আনাস চাকরির জন্য হণ্য হয়ে ঘোরে। অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ
দিয়েও তার চাকরি হয় না। হতাশা তাকে মারাত্মকভাবে ঘিরে ধরে। এদিকে পরিবারের
একমাত্র কর্মক্ষম হিসেবে তার প্রতি সকলে তাকিয়ে আছে। পরিবারে তার বৃদ্ধ মা-বাবা
ও ছোট দুটি বোন রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ বছর আগে তার বাবা পঙ্গু হয়। বাবার
চিকিৎসার খরচ যোগাতে যেটুকু জমি-জমা ছিল তা আগেই বিক্রি করতে হয়। ছোট যে দুটি
বোন রয়েছে তার মধ্যে একজন দ্বাদশ শ্রেণিতে, অন্যজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের
লেখাপড়ার খরচ যোগানোও এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আনাসের বৃদ্ধা মা বাধ্য হয়ে
অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। সেখান থেকে সামান্য যা আয় হয় তা দিয়ে দুবেলা
খাবার জোটে পরিবারের। ঢাকার ফুটপাতে হাঁটার সময় হঠাৎ একদিন আনাসের সাক্ষাত হয়
তার গ্রামের মুনির সাহেবের সাথে। তিনি তার দুঃসম্পর্কের মামা হন। মুনির সাহেব
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। আনাস তার এলাকার ছেলে
এবং আত্মীয় হিসেবে তার প্রতি সহমর্মিতা জন্ম নেয়। তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই মেধাবী
ও সৎ হিসেবে এলাকায় আনাসের সুনাম আছে। সে বিবেচনায় মুনির সাহেব আনাসকে তার
অফিসের হিসাব বিভাগে চাকরি দেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চাকরি করে মাত্র এক বছরের
ব্যবধানে সে এক্সিকিউটিভ থেকে সহকারি ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পায়। ভালো বেতন
পেয়ে সে তার পরিবারের অভাব দূর করতে সক্ষম হয়। আনাস যেমন সৎ ছিল, তেমনি ছিল
সহজ-সরল প্রকৃতির। তাকে কেউ ভালোভাবে বুঝিয়ে কলিজা কেটেও নিতে পারত। ঢাকায় সে
যে মেসে থাকত সেখানে মতি নামে একজন তার রুমে থাকত। একদিন মতি আনাসকে বলে, তার
সাথে ব্যবসা করলে অল্পদিনে সে লাখপতি হতে পারবে। একথা শুনে আনাস নিজেকে সামলাতে
পারে না। একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানিতে মতির মাধ্যমে আনাস বেতনের অর্ধেক টাকা জমা
করে দিতে থাকে। প্রথম দু'মাস এক হাজার টাকা করে লাভ দেয় মতি। সে আনাসকে বলে
প্রতিমাসে যদি এক লাখ টাকা একসাথে জমা করে, তবে দুইমাস পর তার ডাবল ফেরত দেওয়া
হবে। আনাস তার বৃদ্ধা মায়ের সকল সোনা-গহনা বিক্রি করে এবং গ্রামের আরো লোকের কাছ
থেকে টাকা ধার করে পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দেয় “মতির হাতে। দুইমাস পরে পাঁচ লাখে
দ্বিগুণ হিসেবে দশলাখ টাকা পাওয়ার আশায় সে চাকরি ছেড়ে দেয়। সে পরিকল্পনা করে
দশ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা করে সে দ্রুত ধনী হয়ে উঠবে। এদিকে মতিকে গত চার পাঁচ
দিন যাবৎ মেসের কেউ খুঁজে পায় না। আনাস তার মাল্টিপারপাস অফিসে গিয়ে দেখে
সেখানে গেটে তালা ঝুলানো এবং কোনো সাইনবোর্ডও নেই। আনাসের বুঝতে অসুবিধা হয় না
যে, সে প্রতারিত হয়েছে। তিন মাস পর গ্রামের লোকেরা আনাসের কাছ থেকে টাকা না
পেয়ে থানায় মামলা করে। পুলিশ আনাসকে ধরে নিয়ে হাজতে দেয়। অর্থের অভাবে ছোট
দুবোনের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। হাজতে থাকা অবস্থায় আনাসের বৃদ্ধ মা-বাবা মারা যায়। অতি লোভে পড়ে তার জীবনে নেমে আসে করুণ পরিণতি।