‘মানবতা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
মানবতা
মানুষের জন্য মানুষ, থাকবে না জাতি, ধর্ম, বর্ণের কোনো ভেদাভেদ। সম্প্রীতি আর
সৌহার্দে গড়ে উঠবে মানবতা- এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা মনে পরে গেল। কিছুদিন আগের
কথা। আকাশ হালকা মেঘাচ্ছন্ন। শিরশির করে বাতাস বইছিল। আমি আর আমার এক বন্ধু
রাস্তা দিয়ে হেঁটে খুব কাছের একটি মার্কেটে যাচ্ছিলাম। মার্কেটের কাছাকাছি
একটি জায়গায় অনেক লোকের জটলা দেখে আমরাও কৌতূহলী হয়ে সেখানে যাই। সেখানে
গিয়ে আমি যতটা অবাক হয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি রাগ লেগেছিল ভীড় করে
দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের উপর। সেখানে একটি ময়লার ডাস্টবিনে তোয়ালে মোড়ানো একটি
নবজাতক শিশু। জানি না কোন নিষ্ঠুর মা-বাবা এমন জঘন্য কাজটি করেছে। শিশুটি
ঠান্ডা ও ক্ষুধায় অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। অথচ কেউ বাচ্চাটিকে সেখানে থেকে উদ্ধার
করছে না। মুখে অনেকেই আফসোস করছে। কেউ কেউ বলছে এর যে কী পরিচয়? নিশ্চয় এ
কোনো পাপের ফসল। তা না হলে কেউ এখানে এভাবে কেন ফেলে যাবে? ইত্যাদি। একজন মহিলা
শিশুটিকে বাঁচাতে এলে অন্য অনেকে পরোক্ষভাবে তাকে বাধাগ্রস্থ করে। শিশুটি
হিন্দু-মুসলমান না বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান এসব প্রশ্ন তোলে। এসব দেখে আমরা দুই বন্ধু
শিশুটির কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে মার্কেটের ভেতরে গিয়ে ওর গায়ে গরম কাপড়
জড়িয়ে এবং দোকান থেকে খাবার কিনে ওকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি। কেউ কেউ
আমাদেরকেও নানা ধরনের কথা বলেছিল। তাদেরকে আমি বললাম, দেখেন ও কার সন্তান, কী
ওর পরিচয়, এসব কিছুর আগে ওর বড় পরিচয় হলো— ও একজন মানুষ। তাই অন্য কথা না
বলে মানুষ হিসেবেই ওকে বিচার করুন। আমার কথা শুনে সকলে চুপ হয়ে গেল। তারপর
আমরা ওকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসি। সব শুনে মা খুব খুশি হয়। আমরা একটি
নিষ্পাপ শিশুকে প্রাণে বাঁচিয়েছি বলে বাসার সবাই আমাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
আমার বড় বোন নিঃসন্তান বলে সন্তানস্নেহে ওকে নিজের কাছে রেখে দেয়। আমার
দুলাভাইও বলে ‘মানুষের জন্য মানুষ তাই ওর পরিচয় নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই।
এখন শিশুটি আমার বোনের ঘরে অনেক যত্নে রয়েছে। ওর নাম রাখা হয়েছে স্বপ্ন ।