‘মানবসেবার ব্রত’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো:
মানবসেবার ব্রত
গ্রামের নাম রসুলপুর। রহিম মিয়া এই গ্রামেরই একজন বাসিন্দা। অন্যের জমিতে কামলা
দেয় সে। ফসলের মৌসুমে যা আয়-রোজগার করে তা দিয়ে কোনোরকমে বছর পার করে সে। তার
একটি মেয়ে, নাম বকুল। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল রহিম মিয়ার। মেয়েকে
পড়ালেখা করিয়ে ডাক্তার বানাবে। গ্রামের অভাবী মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে
হবে না। তাই মেয়ে বকুলকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে
অনেক ভালো করে বকুল। মাধ্যমিকেও সেই ফল বজায় থাকে। কিন্তু রহিম মিয়ারও বয়স
বাড়তে থাকে। আগের মতো আর পরিশ্রম করতে পারে না সে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম
ব্যক্তি রহিম মিয়া। তাই পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খায় সে। মেয়ে বকুলকে
পড়াশোনা করানোর মতো সামর্থ্য নেই তার। এদিকে বকুলও খুব সুন্দরী। তাই তারও বিয়ের
প্রস্তাব আসতে শুরু করে। রহিম মিয়া উপায়ান্তর না দেখে বকুলের বিয়ের ব্যবস্থা
করে। বিয়েও হয়ে যায় বকুলের। কিন্তু থেমে থাকে না বকুলের জীবন। শ্বশুরবাড়ির
কেউ ছেলের বউকে পড়াশোনা করাতে চায় না। কিন্তু বকুল জানে, শিক্ষা ব্যতীত
নারীমুক্তির কোনো উপায় নেই। তাই সে সকল চাপ উপেক্ষা করে স্বামীর সহায়তায়
পড়াশোনা চালিয়ে যায়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে যথেষ্ট ভালো করায় বকুলের স্বামীর উৎসাহ বেড়ে যায়।
শ্বশুরবাড়ির লোকজন তখন আর তেমন কিছু বলার সুযোগ পায় না। বকুল ভর্তি হয় রাজশাহী
মেডিকেল কলেজে। স্বামীর আর্থিক অবস্থা খুব ভালো না হলেও বকুলকে একটু কষ্ট করে
হলেও পড়াতে রাজি হয় সে। স্বপ্নপূরণের পথে এগোতে থাকে বকুল। বকুলের পড়াশোনা
একদিন শেষ হয়। সে পড়াশোনা শেষ করে একজন ডাক্তার হিসেবে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসে।
গ্রামের মানুষের জন্যে দাতব্য চিকিৎসালয় খুলে সেবা দিতে শুরু করে। দেশ ও দশের
উপকার হয় বকুলের এই পরিশ্রম ও আত্মনিষ্ঠার ফলে। বকুল তার জীবনযুদ্ধে সফল হয়।