‘মানুষ মানুষের জন্য’শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
মানুষ মানুষের জন্য
মাসটি ছিল ডিসেম্বর। কনকনে শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গত
সপ্তাহ থেকে শীতের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। ঢাকা শহরের জামা-কাপড়ের দোকানে
শীতের পোশাকের বেচা কেনাও তাই বেশ রমরমা। সৌরভ আজ বিকালে নিজের জন্য কিছু শীতের
পোশাক কিনতে একটা শপিং মলে গেল। সৌরভ বেশ অবস্থাসম্পন্ন বাবার সন্তান। ঢাকায়
তাদের নিজস্ব বাড়ি-গাড়ি আছে। এক কথায় বলা যায়, আভিজাত্যের ভেতর দিয়েই তার
বেড়ে ওঠা। দোকানে দোকানে ঘুরে সে অনেক শীতের পোশাক কিনে ফেলল। ওভারকোট,
সোয়েটার, কানটুপি, হাতমোজা, চাদর ইত্যাদি নানারকম পোশাক। এতো কিছু কিনেও যেন
তার মন ভরে না। কেনাকাটা শেষ হতে না হতেই সৌরভের এক বন্ধু ফোন করে ওকে শপিং
মলের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে যেতে বলে।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে সৌরভ দেখে ওর তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছে। সৌরভও বন্ধুদের
সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠে। অনেক গল্পগুজব আর খাওয়াদাওয়া করতে করতে রাত প্রায়
দশটা বেজে গেল। সৌরভ আর দেরি করল না। বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।
নিজেদের গাড়িতে বসে আছে সৌরভ। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়িটা কারওয়ান
বাজার এলাকায় এসে জ্যামে পড়ল। হঠাৎ গাড়ির জানালা দিয়ে ফুটপাথে চোখ পড়তেই
সে দেখল কিছু মানুষ রাস্তার পাশে শুয়ে আছে। তাদের কারো গায়ে শীতের পোশাক নেই
বললেই চলে। সৌরভ গাড়ির জানালাটা খুলে সেদিকে ভালো করে তাকায়। গাড়ির ভেতর
শীতের বাতাস তার গায়ে কাঁটা দেয়। সৌরভ এই শীতে মানুষগুলোর এইভাবে শীতের কাপড়
ছাড়া শুয়ে থাকতে দেখে তাদের দুঃখ অনুভব করার চেষ্টা করে।
আবছা অন্ধকারে সৌরভ দেখতে পায় একজন বৃদ্ধ খালি গায়ে কুকড়ে মাটিতে শুয়ে
কাশছে। সৌরভ কয়েক মুহূর্ত ভেবে পাশের একটা প্যাকেট থেকে একটু আগে কেনা চাদরটা
বের করে নিয়ে এগিয়ে যায় বৃদ্ধ লোকটার দিকে। সৌরভ দেখে বৃদ্ধ লোকটি কাঁপছে।
জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সে একবার ভাবল লোকটাকে ডাকবে কিন্তু পরমুহূর্তে সিদ্ধান্ত
বদলে হাতের চাদরটা মেলে বৃদ্ধের গায়ে জড়িয়ে দেয়। সৌরভের মনে একটা
প্রশান্তির অনুভূতি তৈরি হয়। সেই মুহূর্তে জ্যাম ছেড়ে দিলে সৌরভ দ্রুত
গাড়িতে এসে ওঠে। সৌরভ দেখতে পায় বৃদ্ধ লোকটা নিজের গায়ে চাদরটা আরও টেনে
নেয়। একজন লোককে অন্তত শীতের কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দিতে পেরে সৌরভ আনন্দিত হয়।