'মানুষ মানুষের জন্য' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
মানুষ মানুষের জন্য
শিমুলতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মান বাঁচিয়েছে আসাদ। কেননা এ বিদ্যালয় থেকে
একমাত্র আসাদই গোল্ডেন A+ পেয়েছে। অন্য বন্ধুরা কেউ A+, কেউ A আবার কেউবা
B, B+। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাই তাকে ডেকে বেশ আদর করেন, আশীর্বাদ করেন।
আসদ বাড়ি ফিরে দেখে বাড়ির সবাই খুব খুশি। এমনকি গ্রামের অনেকেই তা ভালো
রেজাল্টের জন্য আসাদের মায়ের প্রশংসা করছে। আসাদও মনে মনে খুব খুশি।
কিন্তু তার এই খুশির সঙ্গে সঙ্গে একটা আতঙ্ক কাজ করে মনের ভেতর। কারণ
উচ্চ মাধ্যমিক পড়া হবে কিনা এ ব্যাপারে সে নিশ্চত নয়। কারণ তার বাবা নেই।
আসাদের জন্মের পাঁচ বছরের মাথায় আসাদের বাবা মারা যান। জমি জমাও তেমন
নেই। যা আছে তা দিয়ে বছরের অর্ধেক খোরাক হয়। বাকি সময়টা সে কাজ করে
অন্যের জমিতে আর তার মা অন্যের বাড়িতে। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ার খরচ
বেশি। তাছাড়া কলেজ তো বেশ দূরে। কাজ আর পড়াশুনা কীভাবে হবে এটিই ভাবছে
সে।
মাধ্যমিকের রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে বেশ কিছু দিন হয়ে গেল। এখন উচ্চ মাধ্যমিকে
ভর্তির সময়। কিন্তু ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ আসাদের নেই। এমনকি বাড়িতে
এমন কিছু নেই যা বিক্রয় করে সে কলেজে ভর্তি হবে। আসাদ তাই সারাদিন ভাবে কী
করা যায়। এক পর্যায়ে সে ভর্তি হওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দেয়।
আসাদ যার জমিতে কাজ করে, সেই জমির মালিকের একটা কাজে সে শহরে এসেছে। এত দূর
রাস্তা সাইকেল চালিয়ে সে বেশ ক্লান্ত। তাই কলেজের সামনে বড় আম গাছটির নিচে
বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। কলেজটির নামফলক দেখে হঠাৎ মনে হলো এ কলেজে তারও পড়ার
কথা ছিল। কিন্তু অর্থের অভাবে পড়তে পারল না। এটি ভাবতেই তা চোখ অশ্রু
বেরিয়ে পড়ল। এমন সময় মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক এসে দাঁড়ালেন তার সামনে। কী একটা
জিজ্ঞেস করতে গিয়ে আসাদের চোখে পানি দেখে আর জিজ্ঞেস করলেন না। শুধু
বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? সে বলল, না, তেমন কিছু না। ভদ্রলোককে সব খুলে বলল।
ভদ্রলোক বললেন, তোমার তো মা আছেন, আমার তো তাও ছিল না। আমি একেবারে এতিম
ছিলাম। তবুও আমি লেখাপড়া করেছি। আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁর পুরনো
সাইকেলটি বিক্রয় করে আমার ফরম ফিলআপের টাকা দিয়েছিলেন। আমি আজ সরকারি চাকরি
করি। সেই শিক্ষকের সহযোগিতা চাও। আসাদ কোন কথা না বলে চুপ করে ভাবতে থাকে।
তখন ভদ্রলোক বলেন, ঠিক আছে, আজ থেকে তোমার পড়াশুনার সব দায়িত্ব আমার। এরপর
আসাদের জীবন আর থেকে থাকেনি। সেই ভদ্রলোকের সহযোগিতায় আসাদ আজ অনেক বড়
ব্যবসায়ী। তার আজ তিনটি কোম্পানি আছে। ঢাকা শহরে তার তিনটা বাড়ি। একটি বাড়ি
সে বানিয়েছে সেই ভদ্রলোকের জন্য আর অন্যটি তার মায়ের জন্য। আসাদ আজ
প্রতিষ্ঠিত। সে সঙ্গে আসাদ তার মতো অনেকেরই দায়িত্ব নিয়েছে যারা এক সময় তার
মতোই ছিল। তারা আজ সবাই জানে, মানুষ মানুষের জন্য।