২১, ‘সর্বস্তরে মাতৃভাষা চর্চা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বক্তার ভাষণ রচনা কর।
অথবা, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে ‘বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক’— এই শিরোনামে একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে ‘বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক’— এই শিরোনামে একটি ভাষণ তৈরি কর।
সর্বস্তরে মাতৃভাষা চর্চা
‘সর্বস্তরে মাতৃভাষা চর্চা’ শীর্ষক সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ
ও সমবেত সুধীমণ্ডলী, সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ।
বাংলা আজ আমাদের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু সর্বস্তরে এখনও এ ভাষা চর্চা ও ব্যবহারের
বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি। বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রচলন ও যথার্থ মূল্যায়নের জন্য
সরকারিভাবে আরও সক্রিয় ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ।
সুধীমণ্ডলী,
মুসলিম শাসনামলে এদেশের সরকারি ভাষা ছিল ফারসি এবং ইংরেজ শাসনামলে সরকারি ভাষা
ছিল ইংরেজি। এরপর ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা
পায় বাংলা।
স্বাধীনতার পর নিশ্চিত মনে হয়েছিল স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সরকার ও জনজীবনের
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর মাধ্যমে আমাদের জাতীয় সেবা ও প্রতিভা ত্বরান্বিত
হবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।
এখনও অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি-বিজ্ঞানে ইংরেজির আধিপত্য। আমরা
শুধু একুশে ফেব্রুয়ারির দিন বাংলা ভাষার গুরুত্বের কথা বলি, মহিমাকীর্তন করি,
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চর্চার স্লোগান দিই। একুশের পর পরই তা আবার ভুলে যাই।
সুধীমণ্ডলী,
বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার দুর্বল এ অজুহাতে বলতে শোনা যায় যে, বাংলা ভাষার
মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষা সম্ভব নয়। কিন্তু কথাটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ইতিহাস
আমাদের শিক্ষা দেয় যে, অনুন্নত দেশগুলো উন্নত দেশসমূহের কিছু শব্দ ধার করে
নিজেদের শব্দসম্ভারের দৈন্যদশা কাটায়, যে শব্দ যে ভাষায় নেই, অন্য ভাষা থেকে
ধার করতে আপত্তি কোথায়? উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার যথেষ্ট বইয়ের অভাব
আছে সত্য, তবে চেষ্টা করলে যোগ্যতাসম্পন্ন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা উদ্যোগ নিলে এ
অসুবিধা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কাজেই বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা এবং উচ্চশিক্ষা
সম্ভব নয় একথা যুক্তিতে টেকে না। মাতৃভাষা প্রতিটি জাতির মূল্যবান সম্পদ।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংরেজির প্রয়োজনীয়তা থাকলেও মাতৃভাষা ছাড়া পরিপূর্ণভাবে
মনোভাব প্রকাশ করা যায় না। তাই স্থানীয় পর্যায়ে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। যে
ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নয়, সে ভাষায় অন্যের সঙ্গে প্রাণ খুলে ভাব বিনিময় করা
যায় না, সেসব লোকের পক্ষে মাতৃভাষায় কথা বলা বা লেখাই একমাত্র উপায়। বিশিষ্ট
ভাষাপণ্ডিত ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায়,
“আমরা বঙ্গদেশবাসী। আমাদের কথাবার্তার, ভয়-ভালোবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা
বাংলা।”
সুধীবৃন্দ,
আমরা জানি মাতৃভাষা ছাড়া মন উজাড় করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না। এজন্য
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। নিরর্থক ইংরেজি
প্রবণতা এবং বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা ও হীনম্মন্যতা পরিহার করতে হবে। তাই আসুন
আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষার চর্চা করি।
সবাইকে ধন্যবাদ ।