মায়ের টানে বাড়ি ফেরা শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
মায়ের টানে বাড়ি ফেরা
মায়ের চিঠিটা পড়ে থমকে গেল শাকিল। মা অসুস্থ। যেভাবেই হোক আজকেই তাকে বাড়ি
যেতে হবে। এক ঝটকায় আলনা থেকে শার্টটা নিয়ে গায়ে দেয় সে। তারপর দ্রুত পায়ে
বাস টার্মিনালে রওনা দেয়। তার মনে হতে থাকে এক নিমিষের মধ্যে যদি বাড়ি যেতে
পারতাম! সে অনেক কিছু ভাবতে থাকে। তার স্নেহময়ী মা আজ অসুস্থ। হয়তো আরও কদিন
আগে থেকে তার শরীর খারাপ ছিল। চিঠিটা হাতে পেতে কয়েকদিন তার দেরি হয়েছে। এর
মধ্যে মায়ের অসুখ বেড়ে গেল কিনা? কী অসুখ হতে পারে মায়ের? এরকম অজস্র চিন্তা
ঘুরপাক খায় শাকিলের মাথায়। অবশেষে বাস টার্মিনালে আসে সে। এসেই অস্থির ও
স্তম্ভিত হয়। আজ নাকি বাস ধর্মঘট চলছে৷ কোনো বাস চলাচল করছে না। শাকিল পড়ে
যায় মহাচিন্তায়। হঠাৎ সে বিআরটিসির একটা বাস পেয়ে যায়। এক দৌড়ে বাসে ওঠার পর
স্বস্তিবোধ করে। সিটে বসার পর জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। কিন্তু
বাইরের কোনো কিছুই শাকিলের চোখে পড়ে না। তার চোখে শুধু ভাসতে থাকে মায়ের
স্নেহমাখা মুখখানি। শাকিল ফিরে যায় তার শৈশবে-কৈশোরে। প্রথমদিন স্কুলে যাবার
সময় মা তাকে পরম মমতায় স্কুল ড্রেস পরিয়ে দিয়েছিল। আজও তা শাকিলের মনে আছে।
একবার স্কুল থেকে ফিরে শাকিল দেখে মা তার জন্য নতুন একসেট স্কুল ড্রেস কিনেছে। সে
খুব খুশি হয়। সেদিন রাতে সে স্কুল ড্রেস পরেই ঘুমিয়ে পড়ে। শাকিলের স্মৃতিতে
একের পর এক এমন অজস্র স্মৃতি ভাসতে থাকে। তার মনে হয় মায়ের কিছু হয়নি তো? মনে
মনে ভাবে, আমার মায়ের কিছু হতেই পারে না। মা আমাকে কত্ত ভালোবাসে। মা ছাড়া যে
আমার আর কেউ নেই। সেই কৈশোরে বাবাকে হারিয়ে মা-ই তার একমাত্র ভরসা। হঠাৎ গাড়ি
জোরে ব্রেক কষায় শাকিলের মোহাবেশ কেটে যায়। সে দেখে গন্তব্যে চলে এসেছে। একটু
হেঁটে গেলেই বাড়ি। শাকিল কিন্তু হাঁটল না। এক দৌড়ে বাড়ির দিকে ছুটে গেল। তারপর
দেখে তার স্নেহময়ী মা উঠোনে বসে নবান্নের ধান শুকাচ্ছে। শাকিলকে দেখে উঠে
দাঁড়ায়। শাকিল মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। মা-ছেলের আত্মিক বন্ধন মিলেমিশে একাকার
হয়ে যায়।