'মিথ্যাবাদীর শাস্তি' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
মিথ্যাবাদীর শাস্তি
মিলিটারির বুটের আওয়াজে উর্মিলার বুক ধড়ফর করে ওঠে। উর্মিলা বেশ নিশিন্তই ছিল।
কিন্তু তার সেই নিশ্চয়তা মিথ্যা প্রমাণিত হলো উর্মিলা শুনতে পেল মিলিটারির
বুটের আওয়াজ। উর্মিলা তার কোলের শিশুটিকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে আছে। উর্মিলার
স্বামী মুক্তিযোদ্ধা নির্মল আজ বাড়িতে। প্রায় তিন মাস পর নির্মল গতকাল এসেছে
বাড়িতে। আজই চলে যাবে। নির্মলের যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় হঠাৎ বুটের
আওয়াজ। নির্মল বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। হাতের স্টেনগানটি নিয়ে সে একাই শত্রুর
মোকাবিলা করার জন্য বেরিয়ে পড়তে পা বাড়ায়। উর্মিলা দৌঁড়ে এসে নির্মলের পায়ে পড়ে।
উর্মিলা বলে, 'তুমি একা ঐ নরপিশাচদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পেরে উঠবে না।' এই বলে
উর্মিলা নির্মলের অস্ত্রটিকে ঘরের একটি বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখে। স্বামীকে
খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে উর্মিলা শুধু শিশুটিকে নিয়ে বসে থাকে। এমন সময় উর্মিলা
বুঝতে পারে মিলিটারির বুটের আওয়াজ ক্রমেই আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এক পর্যায়ে উর্মিলা
শুনতে পায় তার দরজায় লাথির আঘাত। উর্মিলা দরজা খুলে দিতেই দেখে এই এলাকার
ট্যারা রাজাকার দাঁত বের করে হাসছে, আর তার পাঁচ-ছয়জন পাকিস্তানি সেনা। তারা ঘরে
ঢুকেই নির্মলকে খুঁজতে থাকে। উর্মিলা এক হাতে কোলের শিশুটিকে আঁকড়ে ধরে আর অন্য
হাতে রাজাকারের পায়ে পড়ে। কিন্তু রাজাকারটি ঠিকই নির্মলকে খাটের নিচ থেকে টেনে
বের করে। নির্মলের সামনেই মিলিটারিরা উর্মিলাকে নির্যাতন করে আর কোলের শিশুটিকে
বেয়নেট দিকে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর নির্মলকে গুলি করে হত্যা করে হাসতে হাসতে
চলে যায়। উর্মিলা কোনমতে তাকিয়ে দেখে তার স্বামী ও কোলের শিশুর ক্ষতবিক্ষত লাশ।
উর্মিলা শুনতে পায় অজস্র নারীর চিৎকার আর গুলি শব্দ। উর্মিলা ঘরের জানালা দিয়ে
দেখতে পায় পাশের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে রাজকারটি। উর্মিলা ভাবতে থাকে এই
ট্যারা রাজাকার গতকাল সবাইকে বলেছে, আগামী সাত দিন এ গ্রামে মিলিটারিরা আসবে
না। গ্রামের সহজ সরল মানুষ তার কথা বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু ট্যারা রাজাকার
মিথ্যা কথা বলে পরের দিনই মিলিটারিদের গ্রামে এনেছে আর মিলিটারিরা পশুর মতো
ঝাঁপিয়ে পড়েছে গ্রামবাসীর ওপর। উর্মিলা চিন্তা করে যেভাবেই হোক এর বদলা নিতে
হবে। মিথ্যাবাদী ট্যারা রাজাকারকে শাস্তি তো দিতেই হবে, সেই সঙ্গে মিলিটারিদেরও।
দিন সাতেক পর উর্মিলা একদিন যায় ট্যারা রাজাকারের বাসায়। ট্যারা রাজাকার
উর্মিলাকে দেখে বলে, তুই ক্যান আইচস। উর্মিলা বলে যে, 'আমি সব ভুলে গেছি ট্যারা
ভাই। আমার বাড়িতে কাল আপনাদের দাওয়াত। আমাকে তো বাঁচতে হবে।' রাজাকার খুশি মনে
উর্মিলার কথায় সায় দেয়। উর্মিলার বাসায় একদিন ট্যারা রাজাকার দুজন মিলিটারি
নিয়ে যায়। উর্মিলাকে দেখে রাজাকার ও মিলিটারিরা খুব খুশি। উর্মিলাও বেশ খুশি।
রাজাকার ও মিলিটারিদের স্বাগত জানিয়ে সে তাদের বসতে দেয় ড্রয়িং রুমে। এরপর বলে
ট্যারা ভাই আপনারা হাত মুখ ধুয়ে আসুন, আমি খাবার দিচ্ছি। রাজাকার ও মিলিটারিরা
অস্ত্র রেখে হাত ধুয়ে খেতে বসে। উর্মিলা তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসে। রাজাকার ও
মিলিটারিরা মনের আনন্দে খাবার খেতে শুরু করে। ট্যারা রাজাকার বলে, 'খুব ভালো
রানছস উর্মিলা। তোর কোন চিন্তা নাই।' উর্মিলা বলল, 'আর একটু মাংস আনি?' ট্যারা
বলল,'যা আন।' উর্মিলা মাংস আনার জন্য ঘরে যায়। ঘরের কোণে স্বামীর রেখে যাওয়া
স্টেনগানটি হাতে তুলে নেয়। এরপর জানালার পাশে এসে দেখে ট্যারা রাজাকার ও
মিলিটারি দুটো মনের আনন্দে মাংস চিবুচ্ছে। উর্মিলা জানালা দিয়ে তাদের এক এক করে
লক্ষ্য করে মিথ্যাবাদী ও কুখ্যাত ট্যারা রাজাকার ও নরপশু পাকিস্তানি মিলিটারি
দুটোকে হত্যা করে।