মুক্তিযুদ্ধে একজন কিশোরের বীরত্বের ঘটনা নিয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো:
মুক্তিযুদ্ধে রুবেলের বীরত্ব
চারদিকে হাহাকার আর পোড়া গন্ধ। ঘরে ঘরে কান্নার রোল। কারো সন্তান, কারো স্বামী,
কারো ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে পাক সেনারা৷ রাতে তারা যে ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা
চালিয়েছে তারই প্রতিচ্ছবি এটি। আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। খোলা
আকাশের নিচে গৃহহারা স্বজন হারা মানুষের অসহায় আর্তনাদ। সান্ত্বনা দেয়ার মানুষ
পর্যন্ত নেই। সফেনা বেগমের ছোট ছেলে গত তিনদিন আগে নানা বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল।
ইতোমধ্যে গতরাতে স্বামীহারা সফেনার বড় ছেলে রাশেদকে ধরে নিয়ে গেছে পাকসেনারা।
লোকমুখে নানা বাড়িতে থাকা ছোট ছেলে রুবেলের কাছে সে খবর পৌঁছে যায়। সে ছুটে এসে
চিনতে পারে না প্রায় কিছুই। শূন্য ভিটায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে পোড়া ঘরের
খুঁটিগুলো। মা তার একপাশে মাটিতে বসে বুক চাপড়াচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। নিষ্ঠুরতার
ছোবলে লণ্ডভণ্ড হওয়া গ্রাম, মানুষ আর মায়ের আর্তনাদ, মেনে নিতে পারছে না ছোট
রুবেল। যে ভাই তাকে হাত ধরে মাছ শিকার করতে নিয়ে যেত, বাবার অভাব কোনদিনও যে ভাই
বুঝতে দেয় নি, সেই বড় ভাইকে ওরা ধরে নিয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতে চোখ লাল হয়ে ওঠে
রুবেলের। তার মায়ের চোখের অশ্রু, ভাইয়ের প্রতিশোধ স্পৃহায় শক্ত হয়ে ওঠে তার
চোয়াল দাঁত কিড়মিড় করে বলে, 'ওদের আমি ছাড়বো না'।
হঠাৎ মুক্তিবাহিনীর চিৎকার শোনা যায়, 'জয় বাংলা'। ছুটে যায় রুবেল, গ্রামের
মনতাজ কাকু সেই দলে আছে। 'আমাকে সাথে নাও, আমিও যুদ্ধ করবো, ওদের খুন করব' বলে
রুবেল। ছোট বলে কেউ তাকে নিতে চায় না। মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়। কিন্তু
রুবেল থেমে থাকে না। সে মনতাজ কাকুকে বলে যে সে যুদ্ধে যাবেই। তিনি তাকে নিয়ে
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যান। সব কথা খুলে বলার পর তাকে গুপ্তচরের কাজ দেয়া হয়।
রাজাকার বসু মিয়ার সহায়তায় পাক সেনা ক্যাম্পে ঝাড়ু দেয়ার কাজ নেয়। সেই
সুবাদে ক্যাম্পের সব খবর পৌছে দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। একবার ছয় জন পাক
আর্মিকে পথ চিনিয়ে দিতে সে সাথে যায়। একটি পুকুর পাড়ে গিয়েই ‘জয় বাংলা’
ধ্বনি দিয়ে পুকুরে ঝাপ দেয় সে। সেই সুযোগে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা
মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে হত্যা করে পাক সেনাদের। পুকুর থেকে সাঁতার কেটে ওপরে
ওঠে রুবেল। মুক্তিবাহিনীর বুদ্ধি অনুযায়ী কাঁদতে কাঁদতে মিলিটারি ক্যাম্পে যায়
সে। ভেজা শরীর দেখে সবাই জানতে চায় কী হয়েছে। সে জানায়, কারা যেন ছয় জনকে
গুলি করে মেরে ফেলেছে সে ছোট হওয়ায় তাকে না মেরে পানিতে ফেলে দিয়েছে। সাঁতার
কেটে কোন মতে বেঁচে এসেছে। এ সংবাদে ক্ষেপে যায় পাক মিলিটারিরা। তারা বলে, তুই
বেঁচে এলি কেন, মরতে পারিস নি? এতে আরও ক্ষেপে যায় রুবেল। শেষ হামলার প্রস্তুতি
নেয় সে। রাতের বেলা সবাই যখন ঘুমাচ্ছিল, দুইজন সেনা টহলরত ছিল। একজনকে পাশের
বাড়ির রূপা ভাবীর সহায়তায় প্রলোভন দেখিয়ে দূরে ডেকে নেয়। অন্যজন তখনও
ঝিমুচ্ছিল। মুখে একটি শিষ দিয়ে জোরে ভোঁ দৌড় দেয় সে। চারদিক থেকে অতর্কিত
আক্রমণ করে পুরো পাকিস্তানি ক্যাম্প জ্বালিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। কিশোর
রুবেলের সাহসিকতা ও বীরত্বে মুক্ত হয় সেই গ্রাম।