"অনিবার্য মৃত্যুর হাত থেকে ফেরা" শিরোনাম একটি খুদে গল্প রচনা করো।
অনিবার্য মৃত্যুর হাত থেকে ফেরা
আমি আর অনির্বাণ ছোট থেকেই একটু বেশি রকমের দুরন্ত। দুজনেই বেশ ভালো রেজাল্ট করে
একই কলেজে ভর্তি হলাম। ভাব আরও জমে উঠল। দুজনেই চিন্তা করি একটু আলাদা কিছু করার।
অ্যাডভেঞ্চারে ভীষণ শখ আমাদের। ঠিক করলাম পর্বতারোহণ শিখব। কিন্তু কে শেখাবে
আমাদের? তা ছাড়া বাড়িতে জানালে কেউ রাজি হবে কিনা তা নিয়েও আমাদের সংশয় ছিল।
প্রায় প্রতিদিনই আমরা এ নিয়ে আলোচনা করি। কিন্তু কোনো রাস্তা বের হয় না।
অবশেষে আমাদের ইচ্ছের কথাটা একদিন সাহস করে বাড়িতে বলে ফেললাম। সাহসটা
পেয়েছিলাম ছোট মামার কাছ থেকে। ফোনে আগেই মামাকে বলে রেখেছিলাম। তিনিই বাড়িতে
এসে কথাটা তুললেন। সৰাই তো প্রথমে মুখ গম্ভীর করে বসে রইল। অবশেষে মা বললেন 'যে
বয়সে সবাই পড়াশোনা করে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে, তখন কিনা পর্বতে চড়বে এরা।'
মামা তাকে মুসা ইব্রাহিমসহ অন্যান্য বাংলাদেশিদের কথা বললেন। তাদের খ্যাতির কথাও
বললেন। সব শুনে বিষণ্ণ মুখে সবাই রাজি হলো। অনির্বাণ আর আমি মনের আনন্দে ব্যাগ
গোছাতে লাগলাম। বান্দরবানের একটি পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আমাদের প্রশিক্ষণ
শুরু হলো। দুই মাস আমরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলাম। ছোট ছোট দুটি পাহাড়েও উঠলাম। ঠিক
হলো ডিসেম্বরে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমরা একটি বড় পাহাড়ে উঠব। দুজনেই প্রহর
গুনি— কবে ডিসেম্বর মাস আসবে? কবে আমাদের স্বপ্নপূরণ হবে? পরীক্ষা শেষ হলো; আমরা
প্রস্তুত হতে লাগলাম আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চারের জন্য। নির্দিষ্ট
দিনে প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পৌঁছে পর্বতে ওঠার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আমরা রওনা
হলাম। জানুয়ারির এক সকালে পরিষ্কার আকাশ দেখে আমরা পর্বতারোহণ শুরু করলাম। খাড়া
গা বেয়ে ডানে-বামে প্রয়োজনমতো এঁকেবেঁকে আমরা উঠতে থাকলাম। কোমরের দড়ি, হাতের
হুক সবকিছুরই ভালো ব্যবহার করে এগিয়ে চলছিলাম আমরা। কিন্তু পর্বতের মাঝামাঝি
যেতেই বিপত্তি দেখা গেল। নিচ থেকে আবহাওয়া যতটা পরিষ্কার মনে হচ্ছিল ওপরে তা
কেমন যেন ঘোলা হয়ে এলো। অস্পষ্ট দেখার ফলে হুকটা ঠিকমতো পাহাড়ের গায়ে লাগানো
যাচ্ছে না। অনির্বাণ আমার একটু নিচেই ছিল। একই অসুবিধায় পড়েছিল সেও। হঠাৎ একটা
চিৎকার শুনতে পেলাম- অনির্বাণের হাতের হুকটা পিছলে নিচে পড়ে গেছে। কোনো রকমে সে
কোমরের দড়িটা দিয়ে আটকে আছে। কিন্তু ক্রমশই নিচের দিকে হেলে পড়ছে। এভাবে আর
কিছুক্ষণ চললে সে নির্ঘাত প্রায় ১০০ ফুট নিচে পড়ে যাবে। তখনি আমি আমার সঙ্গে
থাকা অতিরিক্ত দড়িটি নামিয়ে দিলাম। অর্নিবাণ দড়িটি ধরে নিচের দিকে নামতে থাকল
বটে, কিন্তু মাঝে মাঝে পা পিছলে হেলে পড়তে থাকল। আমি বুঝলাম ও নিশ্চিত মৃত্যুর
মুখে পড়েছে। ওপরে আর না উঠে নিচের দিকে নেমে এলাম আমি। আমার হুকটি দিয়ে
কোনোরকমে তলদেশ পর্যন্ত পৌছালাম। নিচে নেমে অনির্বাণ হ হ্র করে কাঁদতে লাগল। হয়ত
নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে জীবনের অর্থই পাল্টে গিয়েছিল ওর কাছে।