‘নিয়তি’ বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :
নিয়তি
পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলেছে অনেকখানি। আর কিছুক্ষণ পরেই নেমে আসবে অন্ধকার। ঘোর
অন্ধকার। সবাই চলে যাবে নিজের ঘরে তার খুব একান্ত কিছু সময়ের জন্য। কেউ মনে
রাখবে না আজিজ নামে কেউ ছিল। না অফিস, না বাড়ি কোথাও কেউ ডাকবে না আজিজ সাহেব বা
অন্য কিছু বলে। এই মুহূর্তে এসে আজিজ সাহেবের মনে হয় মানুষ খুবই স্বার্থপর।
সময়ের সাথে তারাও তাদের রূপ পাল্টায়।
প্রথমে পরিবারের কথাই বলি, ছোট ছোট শিশু রেখে যখন তাদের মা মারা গেলেন আজিজ সাহেব
তখন আর বিয়ে করেননি। তিনিই সন্তানদের একই সাথে বাবা এবং মায়ের আদর দিয়ে বড়
করেছেন। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, সন্তান যত বড় হয়েছে, তারা ক্রমেই দূরে চলে
গেছে তার কাছ থেকে। এখন সন্তানরা সপ্তাহে বা মাসে এসে খোজ নিয়ে যায় শুধু। আর
অফিস সে তো অনেক দূরের কেউ। কাজের বিনিময়ে পয়সা দেয় প্রতি মাসে। কিন্তু এখানেও
একটা কথা আছে। একজন মানুষ তার জীবনের ত্রিশ বছর কাটিয়েছিল যেখানে, সেখানে যতই
মজুরি দিক তাই বলে কি চাকরির মেয়াদ শেষ হলেই শেষ! পরবর্তীতে একটিবার খোঁজও নেবে
না যে লোকটা কেমন আছে?
আজ এই সূর্যাস্তের মুহূর্তে আজিজ সাহেবের মনে হতে থাকে তার জীবনের ক্রান্তিকাল
চলে এসেছে। হয়ত ওই সূর্য ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে তার জীবনপ্রদীপও নিভে যাবে।
নেমে আসবে শুধুই অন্ধকার। এমনটিই বুঝি হয়, পৃথিবীর নিয়মে সব বদলায় আর সবাই
ভুলে যায় তাদের অবস্থান, তাদের আগমন। তবু নিয়তির এই চিরসত্যটা জেনেই বাঁচতে হয়
মানুষকে। আজিজ সাহেবের সামনে আস্তে আস্তে সূর্যটা ডুবে যায়, নেমে আসে একরাশ কালো
খুব কালো অন্ধকার।