'অদম্য মেধাবী' শিরনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
অদম্য মেধাবী
আফজাল সাহেবের বড় ছেলে আফাজ জন্মান্ধ হলেও তার স্মৃতিশক্তি প্রখর। কোন কথা
একবার শুনলেই সে তা স্মরণ রাখতে পারে। প্রতিবেশীরা আফজাল সাহেবের স্ত্রীর কাছে
প্রায়ই আফাজকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে। অনেকে দুঃখ প্রকাশ করে সহানুভুতি
দেখাতে চায়। এতে করে আফাজের মা আরো ব্যথিত ও কষ্ট পান। গ্রামে সাধারণত
কু-সংস্কার বেশি। তাই কেউ কেউ ছেলের অন্ধত্বের জন্য মায়ের ত্রুটিকে দায়ী করে
গালগল্প ছড়িয়ে বেড়ায়। এতে করে আফজাল সাহেবের স্ত্রীর বাড়ির বাইরে যাওয়াই
প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই তিনি মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। আফজাল
সাহেব তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, তুমি আফসোস করছ কেন? প্রতিটি মানুষই আল্লাহর
সৃষ্টি। তিনি যাকে যেভাবে চান সেভাবে সৃষ্টি করেন। তাই তোমার কোন দোষ নেই।
দেখো, একদিন আমাদের ছেলে সকলের মুখ উজ্জ্বল করবে। আফাজের বয়স পাঁচ বছর হলে
আফজাল সাহেব ভাবলেন, ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু অন্ধ হওয়ায় তাকে
কেউ স্কুলে ভর্তি করাতে চায় না। আশেপাশে তার উপযোগী কোন স্কুল না থাকায় বাধ্য
হয়ে বাসায় প্রাইভেট শিক্ষক রাখলেন আফাজ সাহেব। শিক্ষক তাকে পড়াতে এসে
রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যান। তিনি যা পড়ে শোনান আফাজ হুবহু তা বলে দেয়। বাংলা,
ইংরেজি, গণিত সব বিষয়ে কল্পনাতীত সাফল্য দেখায় আফাজ। বাড়িতে বাবার মোবাইলে
কবিতা আবৃত্তি শুনে সে এমনভাবে রপ্ত করে যে, মনে হয় কোনো দক্ষ আবৃত্তিকার
আবৃত্তি করছে। চারিদিকে তার সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল। শহরের একটি
স্কুলে ভর্তি হয়ে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সে স্কুলসেরা ফলাফল করল। মাধ্যমিক ও
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সে সবাইকে
তাক লাগিয়ে দেয়৷ অদম্য এ মেধাবীকে নিয়ে জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ফিচার প্রচারিত
হতে থাকে। সারাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসতে থাকে তার বাড়িতে। তাকে এক নজর
দেখা ও সাক্ষাতকার নেয়ার হিড়িক পড়ে যায়। সবাই তার বাবা-মাকে এমন সন্তানের
জন্য প্রশংসা করে। অদম্য মেধাবী আফাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন বিভাগে
ভর্তি হয়। গ্রামের যারা তার জন্মান্ধতা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলত তারাও এখন তার
প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আফজাল সাহেব তখন তার স্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেন, বলেছিলাম
না, আমাদের ছেলে একদিন সবার মুখ উজ্জ্বল করবে!