অসুস্থ বন্ধুকে দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে অভিজ্ঞতা

অসুস্থ বন্ধুকে দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।



হাসিখুশি প্রাণবন্ত কেউ যদি হঠাৎ করে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে তা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। কেননা তা অভাবনীয় কষ্টদায়ক হয়। এমন ঐ আকস্মিক কষ্টের বুক জুড়ে আলোড়ন তুলেছে আমার প্রিয় বন্ধু অসুস্থতার কথা শুনে। আর তাকে দেখতে গিয়ে যে অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা যেমন বেদনাদায়ক তেমন মর্মান্তিক।

পরি কি মরি করে আমরা তিন বন্ধু একটা সিএনজি নিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক লাগলো। হাসপাতালে ঢুকেই শুনলাম আইসিইউ থেকে অর্ণবকে কেবিনে আনা হয়েছে। ডাক্তার নার্স ছাড়া অন্য কেউ কেবিনে ঢুকতে পারছে না। শুনে একইসাথে অবাক ও হতাশ হলাম। ভিজিটররা সবাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। এমনকি তার বাবা মাও কেবিনের দরজার পাশে চেয়ারে বসে আছেন। কেউ কেউ বলাবলি করছেন, তাহলে কেবিনে আনা হলো কেন? আইসিওতে রাখলেই তো হতো। অবশ্য এ বিষয়টা ডাক্তাররাই ভালো জানেন। কিন্তু তারা কেউ মুখ খুলছে না। লোকজনের পারস্পরিক আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, অর্ণব বেশ কিছুদিন ধরেই দুই পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুর উপর ভর দিতে পারছিল না। প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছিল। অর্থাৎ দাঁড়ানো বা হাঁটাচলা করা প্রায় বন্ধ ছিল। দুজনে উঁচু করে ধরে তাকে টয়লেটে বসাতে হতো। হাত দিয়ে সব কাজই করতে পারত। কিন্তু ইদানিং হাতের আঙ্গুলগুলোতেও ব্যথা হচ্ছিল। হাত দিয়ে তুলে খেতে, এমন কি লিখতেও কষ্ট হচ্ছিল। চিকিৎসা বেশ কিছুটা সেড়ে উঠছিল। ধীরে ধীরে হাঁটতে পারত, ব্যথাও কমে গিয়েছিল। সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ দাঁড়াতে গিয়ে ও পরে যায়। তারপরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এসব শুনে হৈচৈ করা অর্নবের জন্য আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল।

বয়স্কা একজন ডাক্তারের কেবিনের ঢোকার সময় একটু দাঁড়ালেন। আমরা দুজন এগিয়ে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে ওকে দেখলাম। চেনা যায় না। শুকনো পান্ডুর মুখ, চুল উঠে গেছে অনেক, চোখ দুটো কোঠরে ঢোকা, শরীরে শুধু হাড়গুলিই আছে। এই অর্ণবকে আগের অর্ণবের সাথে মিলাতে গিয়ে দুজনেই কেঁদে উঠলাম। ডাক্তার ইশারায় বারণ করেছেন। অর্নবের চোখ দুটো একটু খুলে গেল। নিস্পৃহ সে দৃষ্টি। মনে হয় চিনতে পারল না। আমরা নাম বললাম। অর্নবের ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক হল, অস্পষ্ট আওয়াজ হলো, কিছু বোঝা গেল না কি বলতে চাইলো ও। আমরা ডুকরে ডুকরে কাঁদছি। কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম, ও যেন বেঁচে ওঠে, সুস্থ হয়ে ওঠে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post