"অতি লোভে তাঁতি নষ্ট" শিরোনাম একটি খুদে গল্প রচনা করো।
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
আমার বাবা বেশ ভালো চাকরি করেন। কিন্তু তারপরও আমাদের সংসারে টানাটানি লেগেই
থাকে। মা এ নিয়ে বাবাকে প্রায় প্রতিদিনই নানা কথা বলেন। কিন্তু বাবা নির্বিকার।
তাকে দেখে মনে হয় তিনি নির্বাণের পথে আছেন। মায়ের এত কথাবার্তা কোনোকিছুই যেন
তাকে স্পর্শ করে না। আমাদের প্রতিবেশী তরফদার চাচা বাবার মতো অত ভালো চাকরি করেন
না। কিন্তু তারপরও বেশ থাকেন। অর্থনৈতিক কষ্ট তার নেই। মা অধিক কৌতূহলী হয়ে তার
সম্পর্কে একটু খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তাতে বাবার ওপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে
গিয়েছে। মা জানতে পেরেছেন যে, তরফদার চাচা শুধু চাকরি করেই সংসার চালান। গ্রামের
বাড়ির বা অন্য কোনো স্থান থেকে তার কোনো অর্থ আসে না। ফলে বাবার ওপর মায়ের
সন্দেহ বেড়ে গিয়েছে। তাঁর বদ্ধমূল ধারণা বাবা নিশ্চয় অন্যকোথাও টাকা খরচ করেন।
মায়ের এ অহেতুক সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্যই বাবা তরফদার চাচার সঙ্গে মিশে তার
অর্থনৈতিক উৎস জানার চেষ্টা করেন। অবশেষে একদিন তিনি জানতে পারেন যে, তরফতার চাচা
দুর্নীতি করে টাকা রোজগার করেন। প্রথম প্রথম তার দুর্নীতি সহনশীল পর্যায়ে থাকলেও
লোভের বশবর্তী হয়ে তিনি এখন বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে ক্রমশ নিজেকে জড়িয়ে
ফেলছেন। বাবা তাকে নিষেধ করেন। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। কিছুদিন পর তরফদার চাচা
একটা গাড়িও কিনে ফেলেন। তাতে তার সংসারে আপাতদৃষ্টিতে সুখ এলেও আমাদের সংসারে
অশান্তি নেমে আসে। মা বাবার ওপর আরও চড়াও হন। বাবা আরও বেশি নির্লিপ্ত হয়ে যান।
মাকে তিনি তরফদার চাচার দুর্নীতি ও লোভের কথাও বলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয় না।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকে। একদিন বিকেলে তরফদার চাচার বাড়ির সামনে বেশ বড়
জটলা দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে তরফদার চাচা অনেকের
কাছ থেকেই বেশ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা এখন টাকা আদায় করতে
তরফদার চাচাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কয়েকদিন পর এক সন্ধেবেলায় তরফদার চাচা আমাদের
বাড়িতে আসেন। আমরা তাকে দেখে বেশ অবাক হই। তার বাড়ির ঘটনা তুলতেই তিনি তা হেসে
উড়িয়ে দেন। তারপর বাবাকে বলেন, 'আসলে লোভ না থাকলে ওপরে ওঠা যায় না। আমরা সবাই
কথাটা শুনে তাজ্জব বনে যাই। এমনকি মাও কথাটা শুনে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। সেদিন
অনেক রাতে বাইরের শোরগোলে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলে দেখি পুলিশের গাড়ি আর
তার সামনে হ্যান্ডকাপ লাগানো অবস্থায় তরফদার চাচা দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের দেখে
হেসে বললেন 'ভুল করে তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কাল সকালেই ছেড়ে দেবে। কিন্তু
তরফদার চাচা পরদিন ফিরে আসেননি। দুর্নীতির দায়ে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
মা বাবাকে এখন আর কিছুই বলেন না। কারণ বাবা মাকে সেই সোনার ডিমপাড়া রাজহাঁস আর
তার মালিকের গল্পটি শুনিয়েছেন।