‘পাহাড় ধস' বিষয়ক একটি খুদে গল্প রচনা করো।
পাহাড় ধস
পাহাড়ের গায়ে ঘর বানিয়ে পরিচিত অনেকেই বাস করছে। আত্মীয়স্বজনদের নিষেধ অমান্য
করে রায়হান মিয়াও স্ত্রী-সন্তানসহ সেখানে গিয়ে বাস করতে থাকে। তিনদিনের টানা
বৃষ্টিতে একরাতে। পাহাড় ধস হয়। চারদিকে পানি আর কাদার ছড়াছড়ি। এর মধ্যে শোনা
যায় মানুষের আহাজারি, চিৎকার, চেঁচামেচি। চারপাশে অন্ধকার, মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ
চমকাচ্ছে। রায়হান মিয়ার ঘরও ধসে পড়েছে। রায়হান মিয়া স্ত্রী-সন্তানদের খুঁজতে
থাকে। অন্ধকারে হাতড়াতে থাকে এদিক-ওদিক। কিন্তু কাউকে খুঁজে পায় না। বৃষ্টির
পানি আর কাদায় রায়হান মিযার শরীর একাকার হয়ে গেছে। কাদার মধ্যে পা আটকে যাচ্ছে
বার বার। রায়হান মিয়ার উৎকণ্ঠা বাড়ছে। কয়েকবার স্ত্রী রমেছা বেগমের নাম ধরে
ডাক দেয়— 'রমেছা রে, তুমি কোথায়? কই গেলা তুমি? আমরার আদরের পোলামাইয়া কই গেলো
গো। তুমারে পাই না কেন গো?’ রায়হান মিয়ার আহাজারি আর চোখের জল বৃষ্টির পানিতে
ধুয়ে যায়। উপচেপড়া দীর্ঘশ্বাস শেষে অবশেষে ভোর হয়। দু'একজনের মুখ দেখা যায়।
রায়হান মিয়া তাদের জিজ্ঞেস করতে থাকে— তোমরা কি আমার বিবি রমেছারে দেখছ? অ
কাশেম ভাই,
-তোমরা কি আমার পালা-মাইয়ারে দেখছ?
-না গো মিয়া ভাই। তুমি আমার মাইয়াডারে দেখছ? তারে তো খুঁইজা পাইতাছি না।
-চলো মিয়া ভাই। ওগো খুঁইজা বের করি।
রায়হান মিয়া ও কাশেম ব্যাপারী তাদের স্ত্রী-সন্তানদের খুঁজতে থাকে। এর মধ্যে
উদ্ধারকর্মীরা ছুটে আসে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তারা রায়হান মিয়ার
স্ত্রী-সন্তানদের উদ্ধার করে। কিন্তু ততক্ষণে তাদের দেহ থেকে প্রাণপাখি হারিয়ে
গেছে। ওদিকে কাশেম মিয়ার মেয়েকে আহত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়। রায়হান মিয়া
স্ত্রী-সন্তানদের হারিয়ে একেবারে নির্বাক হয়ে পড়ে। তার শুধু আফসোস হতে থাকে;
কেন সে পাহাড়ের ঢালে ঘর বানিয়ে বসবাস করছিল। সে তো জানতো প্রতিবছরের পাহাড়
ধসের কথা। প্রতিবছর যে পাহাড় ধসে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে তা জেনেও কেন রায়হান
মিয়া এমন কাজ করতে গেল। রায়হান মিয়া এখন যাকেই দেখে বলে ওঠে — তোমরা মিয়া ভাই
পাহাড়ে ঘর বানাইয়ো না। পাহাড়ে ঘর বানাইয়ো না। বাঁচবার চাইলে পাহাড়ে ঘর
বানাইয়ো না।'