পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ভ্রমণে অর্জিত অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের প্রতি আমি কেমন যেন একটি অনিবার্য আকর্ষণ অনুভব করি।
সে আকর্ষণেই একদিন গিয়ে হাজির হয়েছিলাম পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে, যা সোমপুর বিহার
নামেও পরিচিত। এ বিহারটির অবস্থান বর্তমান নঁওগা জেলার বদলগাছি উপজেলা পাহাড়পুর
গ্রামে। জয়পুর হাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে ৫কি.মি. পশ্চিম
দিকে পাহাড়পুর গ্রামে যখন পৌঁছালাম তখন বেলা প্রায় ১১টা। স্থানীয় রেস্টুরেন্ট
থেকে সকালের নাশতা সেরে আমরা মূল বিহারটি পরিদর্শনে মনোনিবেশ করলাম।
পাহাড়পুর বা সোমপুর বৌদ্ধবিহারটি পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম
শতকের শেষের দিকে কিংবা নবম শতকের প্রথম দিকে তৈরি করেন। এটি বাংলাদেশের
উত্তরবঙ্গ প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত প্লাইস্টোসিন যুগের বরেন্দ্র নামক অনুচ্চ
এলাকার অন্তর্ভুক্ত। ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।
১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
বৌদ্ধবিহারটিতে গিয়ে দেখা গেল এর ভূমি পরিকল্পনা চতুষ্কোনাকার। এর চার দিক চওড়া
সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল সীমানা দেয়াল বরাবর অভ্যন্তরভাগে সারিবদ্ধ ছোট ছোট
কক্ষ ছিল। উত্তর দিকের বাহুতে ৪৫টি এবং অন্য তিন দিকের বাহুতে ৪৪টি করে কক্ষ ছিল।
কক্ষগুলোর প্রতিটিতে দরজা আছে। কোনো কোনো কক্ষে কুলুঙ্গি এবং মেঝেতে দৈনন্দিন
কাজে ব্যবহৃত নানা দ্রব্য পাওয়া গিয়েছে। বিহারের উত্তর বাহুর মাঝ বরাবর রয়েছে
প্রধান ফটক। এখান থেকে ভেতরের উন্মুক্ত চত্বরে প্রকাশের জন্য যে সিঁড়ি ব্যবহৃত
হতে হতো তা আজও বিদ্যামান।
বিহারের অন্তর্বর্তী স্থানে গিয়ে দেখা গেল চত্বরের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে
কেন্দ্রীয় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। বিহারের কেন্দ্রে শূন্যগর্ভ কক্ষে একটি ইট
বাঁধানো মেঝে আবিষ্কৃত হয়েছে। এ মেঝে কক্ষের বাইরে চারদিকের কক্ষ ও মন্ডপের প্রায়
একই সমতলে অবস্থিত। মন্দিরের শীর্ষদেশের কোনো নিদর্শন নেই বিধায় এর ছাদ সম্পর্কে
সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। বিহারের দক্ষিণ পূর্ব কোণ থেকে প্রায় ৪৯ মিটার
দক্ষিণে আনুমানিক ৩-৫ মিটার প্রশস্ত স্নানঘাট দৃশ্যমান হয়। অনুমান করা হয় এ ঘাট
নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। স্নানঘাট থেকে ১২মিটার পশ্চিমে পূর্বমুখী একটি ইমারত পাওয়া
গেছে যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় গয়েশ্বরী মন্দির। এতে একটি চতুষ্কোণ হলঘর রয়েছে।
পশ্চিমে উদগত একটি দেয়ালের বাইরের দিকে রয়েছে একটি বর্গাকার পূজার কক্ষ। মন্দিরের
সামনের দিকে রয়েছে বিশাল চত্বর।
মূল বিহার থেকে বেরিয়ে গেল পাহাড়পুর সংলগ্ন জাদুঘরে। সেখানে দেখলাম- বেলে পাথরের
চামুন্ডা মূর্তি, লাল পাথরের শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণ মুর্তি,
বেলেপাথরের কীর্তি মূর্তি, গৌরি মূর্তি, বিষ্ণ মূর্তি, মনসা মূর্তি, দুবলহাটির
মহারানির তৈলচিত্র ইত্যাদি। ঘুরতে ঘুরতে দিনের আলো প্রায় শেষ হয়ে আসছে দেখে
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রেলস্টেশনের দিকে রওনা হলাম অসীম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে।