‘পরাজয় মানে না বীর’ বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো:
পরাজয় মানে না বীর
ফিরোজ সাহেব সরকারি চাকরি করেন। সুখের সংসার তাঁর কিন্তু তাঁর কোনো ছেলেমেয়ে
নেই। একটা সন্তানের জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। পির-ফকির ধরেছেন, নাম করা
ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে বিয়ের পাঁচ বছর পর
তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হন। কিন্তু ফিরোজ সাহেবের যে কন্যাসন্তান জন্ম নেয় সে
হাঁটতে-চলতে পারে না। তার নাম পল্লবী। পল্লবীর বাবা-মা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।
তাঁদের মনে ভয় ঢুকে যায়, এই মেয়ে বড় হয়ে করবে কী! কিন্তু পল্লবী ছোটবেলা
থেকেই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী ছিল। তাই প্রতিবার সে ক্লাসে প্রথম হতো। শিক্ষকরাও
তাকে খুব স্নেহ করতেন। পল্লবীর পড়াশোনার পেছনে তাঁর বাবার অবদানও খুব কম ছিল না।
ফিরোজ সাহেব প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং ছুটি হলে নিয়ে আসতেন।
পল্লবীও তার পড়াশোনার প্রতি খুব সচেতন ছিল। সে জানত তাকে পৃথিবীতে টিকে থাকতে
হলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। সে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বেশ ভালো করে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা দেয়। অনার্সের সব পরীক্ষায় সে ভালো করতে
থাকে। অনার্সের শেষ দিকে এসে সে জানতে পারে, শারীরিক প্রতিবন্ধিদের জন্য বাংলাদেশ
সরকার কোটার ব্যবস্থা রেখেছে। যার সাহায্যে সব ধরনের প্রতিবন্ধিরা তাদের
স্বাবলম্বী মানুষের কাতারে নিয়ে আসতে পারে। পল্লবী এটা জানতে পেরে খুব খুশি হয়।
সে নতুন উদ্যমে চাকরির জন্য পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়। পড়াশোনা শেষে নানা ধরনের
চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। একদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার
পদে চাকরিও পেয়ে যায়। এখনও বিয়ে হয়নি পল্লবীর। বাবা-মার বৃদ্ধাবস্থায়
পারিবারিক সকল ব্যয় পল্লবী নির্বাহ করে। আমরা যদি প্রতিবন্ধিদের অবজ্ঞা না করে
তাদের অক্ষমতাকে স্মরণে রেখে তাদের এগিয়ে যাবার সুযোগ ও অনুপ্রেরণা দেই, তবে
অবশ্যই তারা জীবনে পল্লবীর মতো উন্নতি করতে পারে।