"পরিবারের দায়িত্ব " শিরোনাম একটি খুদে গল্প রচনা করো।
পরিবারের দায়িত্ব
পিতার আকস্মিক মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়া ছেড়ে চাকরি নিয়েছে
রাজু। ছোট ভাই মিঠু ও বোন মিনার মধ্যেই সে দেখতে পায় তার স্বপ্ন পূরণের প্রেরণা।
মাস দুয়েক আগে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় রাজুর বাবা মারা যান। বাবার
মৃত্যুর সাথে সাথে মৃত্যু হয় রাজুর জীবনের সকল স্বপ্নের। হৃদয়ের স্বপ্নবৃক্ষ
থেকে সকল পাতা ঝরে পড়ে অকস্মাৎ ঝড়ে। ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসে রাজুর চারপাশ।
রাজু এস.এস.সিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর তার বাবা যেন পৃথিবী হাতে পেয়েছিলেন।
রাজ্যের আনন্দ ভর করেছিল তার সমস্ত সত্তার কাছে। মানুষের কাছে বলে বেড়াতেন,
'আমার রাজু ডাক্তার হবে। গরিব-দুঃখী মানুষের চিকিৎসা করবে।' এক বুক আশা নিয়ে
তিনি রাজুকে ভর্তি করিয়েছিলেন ঢাকা কলেজে। অভাবের সংসার, তবুও প্রতি মাসে তিন
হাজার করে টাকা পাঠাতেন ছেলের জন্য। কিন্তু চার মাসের মাথায়ই তিনি পৃথিবী
ছাড়লেন। ছোট দুই ভাইবোন ও মায়ের কথা ভেবে রাজু কুল-কিনারা হারিয়ে ফেলে।
একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির করুণ মৃত্যুর ফলে পুরো পরিবার যেন নিঃস্ব হয়ে
যায়। কোনো উপায়ান্তর না দেখে রাজু চলে যায় গাজীপুরে। চাকরি নেয় একটি পোশাক
কারখানায়। নির্দিষ্ট ডিউটির পরে ৬ ঘণ্টা ওভারটাইম। তারপর বাসায় ফিরে সামান্য
বিশ্রাম। ভোরবেলায় আবার কারখানায়। প্রতি মাসে চার হাজার টাকা করে সে তার মায়ের
কাছে পাঠায়। এই টাকা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। ছোট ভাই মিঠু পঞ্চম শ্রেণিতে
ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। বোন মিনা পি.ই.সি
দেবে এবারই। দুজনই পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী ও মেধাবী। মিঠু মাঝে মাঝে এটা সেটা করে
সামান্য রোজগারের চেষ্টা করে। কিন্তু রাজুর আপত্তির ফলে সে তা বন্ধ করে।
কোনোভাবেই রাজু তার ছোট ভাইবোনকে বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি। ওদের সকল প্রয়োজন
মেটানোর জন্য রাজু দিন রাত খেটে যায়। রাজু ভাবে, সে যা পারেনি, তার ছোট ভাইবোন
যেন তা পারে। নিজের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কবর দিয়ে ভাই বোনের ডাক্তার হবার
স্বপ্নের বীজ বোনে সে। ছোট ভাইবোনদের মধ্যেই সে তার বাবার স্বপ্ন দেখতে পায়।
ওদের দ্বারাই সে পূরণ করতে চায় তার বাবার আজন্ম লালিত স্বপ্ন। এদিকে রাজুর মা
প্রায়ই ওর পরীক্ষার খবর জানতে চায়। রাজু এটা সেটা বলে তাকে বোঝায়। কোনোভাবেই
কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ভাইবোনের স্বপ্ন পূরণের জন্য দিনরাত খেটে যায় সে।