জাতীয় দৈনিক প্রকাশের জন্য পুরাকীর্তি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদনের খসড়া
লেখো।
পুরাকীর্তি একটি দেশের ঐতিহ্য
সানিম আল-মামুন : ঢাকা : বাংলাদেশের ইতিহাস হাজার বছরের। বাংলাদেশের
ইতিহাসের ধারায় প্রাচীন কাল থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম আমলের স্মৃতি-কীর্তি,
স্থাপত্যে ভরপুর। পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ময়নামতি, ও লালমাইয়ের পুরাকীর্তি প্রায়
সকলের জানা। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য পুরাকীর্তি, যা সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে
কিংবা অনেক কিছুই ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।
বখতিয়ার খলজির স্মৃতিধন্য নওদারুজ এখনো খনন করা হয় নি। মুন্সীগঞ্জে ঐতিহাসিক
ইদ্রাকপুরের কেল্লা কবেই মাটিতে দেবে গেছে, কেবল জেগে আছে বাউন্ডারি। ঈসা খাঁর
স্মৃতিবিজড়িত জঙ্গলপুর, এগারোসিন্ধু এখনো অবহেলিত। অবহেলিত ওসমান খাঁর নির্মিত
কেল্লা, বোকাইনগর। অনুরূপভাবে অবহেলিত মুন্সিগঞ্জ সড়কের পাশে শ্যামনগর উপজেলার
ঈশ্বরীপুর রাজাদের দুর্গ, হাম্মামখানা, বারোদুয়ারী, টাঙ্গা মসজিদ, বার ওমরার
মাজাত, বিবির আস্তানা, যশেশ্বরী মন্দির। নরসিংদী জেলায় 'উয়ারী বটেশ্বর' এক অমূল্য
পুরাসম্পদ। উয়ারি বটেশ্বরে আড়াই হাজার বছর আগেকার এক সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে।
কিন্তু এখনো তা মাটির তলায় চাপা পড়েই আছে, উদ্ধারের কোনো প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ
নেয়া হয় নি।
মন্টোগোমারি মার্টিনের 'ইস্টার্ন ইন্ডিয়ে' গ্রন্থে আছে, রংপুর-দিনাজপুর বড়
রাস্তার ধারে করতোয়া নদীর উভর তীরে অবস্থিত প্রাচীন দুর্গ। অথচ এখনো তা অবহেলিত।
একইভাবে সীতাকোট বৌদ্ধ বিহার, নওয়াবগঞ্জে বাংলা স্বাধীন সুলতান হোসেন শাহের ছোট
সোনা মসজিদ, মোঘল আমলের তহখানা। অনুরূপভাবে একি অবস্থা সোনারগাঁয়ের অমূল্য
স্থাপত্য কীর্তিসমূহ, বখতিয়ার পুরের পুরাকীর্তি, বড় দরগায় ইসমাঈল গাজীর মাজার
লালমনিরহাট কাকিনার রাজবাড়ী, নীলফামারীর নীল সাগর ও চিনি ভীসুবিহার- যেখানে চিনা
পরিব্রাজক হিউ-এন সাং পর্যটন করেছিলেন। একইভাবে অবহেলিত রাজশাহীর বড় কুটির, বাঘা
মসজিদ, আলি মর্দানের মাজার, সেন রাজবংশের স্মৃতি বিজরিত পুষ্পবিহার, জাহানাবাদ
স্মৃতিস্তম্ভ, পুঠিয়ার রাজবাড়ি, নওগাঁয়ের কমুম্বা মসজিদ, হযরত নিয়ামত শাহের মাজার
ও মসজিদ এবং আরও কত কিছু।
এককথায়, সারা বাংলাদেশ পুরাকীর্তিতে ভরপুর। এ সম্পর্কে বিশেষভাবে জানা যাবে,
'অ্যানলস অব দি রুরাল হিস্টরি অব বেঙ্গল' এবং আবিদ আলীর 'মেমোরিস অব গৌড় অ্যান্ড
পান্ডুয়া' ইত্যাদি গ্রন্থে। এ দেশ শুধু হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান আমলের পুরাকীর্তি
নয়। পুর্তগিজদেরও কিছু পুরাকীর্তি রয়েছে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি
চত্বরে রয়েছে পুর্তগিজ সমাধিস্তম্ভ। এতে পুর্তগিজ ভাষা ও লিপি উৎকীর্ণ রয়েছে।
স্থানটি সংরক্ষিত হলে পুরাকীর্তি হিসেবে দর্শনীয় বিষয় হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে।
সুপ্রাচীন জাতি হিসেবে আমাদের যে সুবিশাল ঐতিহ্য রয়েছে, তা ধরে রাখার জন্যেই
যাবতীয় পুরাকীর্তি ও সংস্কার অত্যাবশ্যক। এজন্যে সরকারের আর্কিওলজিক্যাল
ডিপার্টমেন্ট নামে একটি দপ্তরও আছে। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী আর্থিক বরাদ্দ না
থাকায় কিংবা অভিজ্ঞ ও যত্নশীল লোকের অভাবে এসব ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি যথাযথভাবে
খনন, উদ্ঘাটন, সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আশা করি, এ বিষয়ে
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে আমাদের এ ঐতিহাসিক
পুরাকীর্তিসমূহ সংরক্ষণে সচেষ্ট হবেন।