একটি পূর্ণিমা রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে অনেক কিছুই দেখেছি, অনেক ঘটনারই মুখোমুখি হয়েছি। স্মৃতিপটে
যেগুলো অম্লান হয়ে আছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো একটি পূর্ণিমা রাতের অসম্ভব
সুন্দর দৃশ্য।
পড়ালেখার জন্য ছোটবেলা থেকেই শহরে আছি। নয়ন আমার খুব কাছের বন্ধু। গ্রামের সহজ
সরল প্রকৃতির একটি ছেলে। তার আমন্ত্রণে সেবার গেলাম তাদের গ্রামের বাড়ি নড়াইলে।
মধুমতী নদীর কোলঘেঁষে তাদের বাড়িটি। সময়টা চৈত্রের শেষের দিকে। সারা প্রকৃতিকে
সৌন্দর্য সম্পদে ভরিয়ে দিয়ে বসন্ত তার শ্রেষ্টত্ব ঘোষণা করছে। অপরূপ প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যে ভরপুর মৌপুরা গ্রামটি। গ্রামের পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত মধুমতী নদী।
বিকালের দিকে যখন নয়নের সঙ্গে গ্রাম ঘুরে দেখতে বের হয়েছিলাম তখনও জানতাম না রাতে
কী বিস্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো।
আমরা নদীর পাড়ে গিয়ে বসলাম। দখিনা বাতাস আমার সমস্ত দেহ মনকে এলোমেলো করকম
দিচ্ছিল। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছি আর ভাবছি, আমার এই বাংলাদেশের প্রকৃতি কত
মনোমুগ্ধকর ও ঐশ্বর্যমন্ডিত। হঠাৎ করেই চোখ পড়ল পূর্ব দিগন্তে প্রকান্ড একটা চাঁদ
উঠছে। আমি জানতাম না সেদিন পূর্ণিমা। চোখ ফেরাতে পারি না এমন অবস্থা। সময়ের সঙ্গে
সঙ্গে চাঁদ তার রূপালি আভায় সমস্ত প্রকৃতিকে ভরিয়ে তুলছে। আমি তখন আনন্দে
আত্মহারা যেন স্বপ্নময় একটা সময় পার করছি। নদীর ওপারের গ্রামগুলো তখন কালো রঙের
ছোপের মতো মনে হচ্ছে। এপারের নারকেল পাতার ওপর চাঁদের আলোর প্রতিফলন যেন পূর্ণিমা
রাতের অসীম মাহাত্ম্য প্রচার করছে। মনের অজান্তেই গেয়ে উঠলাম-
"চৈতালী চাঁদনী রাতে
নব মালতীর কলি,
মুকুল নয়ন মেলি
নিশি জাগে আমারই সাথে।"
নদীপাড়ে নরম ঘাসের উপর শুয়ে আছি। মাটির সোঁদা গন্ধে প্রাণ মন যেন ভরিয়া তুলছে,
তার ওপর নদীর দখিনা বাতাস আর চাঁদের রুপালি আলোর মাখামাখি। সময় যে কোথা থেকে
গড়িয়ে গেল টেরই পেলাম না। নয়নদের বাড়ি থেকে বারবার ফোন করছে, তাই
অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও আমি সেই স্বপ্নময় জগৎ থেকে বাস্তবের ঘরে ফিরে চললাম।