"রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি
গাওদিয়া গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। এখানেই বাস করে দরিদ্র কৃষক
উপেন। তার বসতবাড়িটি ছাড়া জমিজমা তেমন নেই। বাড়ির চারপাশে একটা বড় বাগান আছে
তার। তাতে নানারকম ফল ধরে। মূলত এই হচ্ছে তার জীবিকার উৎস। কিন্তু সে সুখটুকুও
সইল না। একদিন জমিদারের পেয়াদা এসে তাকে রাজবাড়িতে যাবার তলব করে গেল। খুব
ভয়ে আর সন্তর্পণে কৃষক উপেন জমিদারের দরবারে প্রবেশ করল। জমিদার তাকে দেখে
বললেন, 'বুঝলে উপেন, আমি খুব বড় একটি বাগানবাড়ি করব। কিছু জমি কম পড়ছে। তোমার
জমিটির অবস্থান বেশ ভালো। ওটি পেলে বাগানবাড়িটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান হবে।
তোমাকে এর জন্য আমি দাম দেবো।' কথাগুলো শুনে উপেনের গলা শুকিয়ে গেল। সে বুঝতে
পারল জমিদার তাকে ভিটে-মাটি থেকে উৎখাত করতে চাইছে। সে খুব বিনয়ের সঙ্গে
জমিদারকে জানাল 'আজ্ঞে বাবু, আমার তো ওটুকু জমিই সম্বল। ওটি বিক্রি করলে তো আমি
গৃহহীন হয়ে যাব। তা ছাড়া বাপ-দাদার ভিটে বলে কথা। না বাবু, ও জমি আমি বেচতে
পারব না।' জমিদার তার কথা শুনে তাকে চলে যেতে বললেন। কিছুদিন পর কোর্টের কিছু লোক
এসে মিথ্যে মামলা দিয়ে উপেনকে তার ভিটে-মাটি থেকে উৎখাত করল। চোখের জলে উপেন
পিতৃপুরুষের ভিটে ভিজিয়ে দিল। কিন্তু তাতে জমিদারের পাষাণ হৃদয় এতটুকুও গলল না।
অগত্যা উপেন গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। পথে পথে নানা স্থানে ঘুরতে থাকল সে।
একসময় ঘুরতে ঘুরতে সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করল সে। তারপর আরও কিছুকাল গেল। কিন্তু
উপেন কিছুতেই মন থেকে ভিটে-মাটির স্মৃতি মুছতে পারল না। অগত্যা সে মনস্থির করল
মৃত্যুর আগে একবার হলেও সে তার ভিটে মাটি দেখতে যাবে। অনেক পথ পেরিয়ে সে নিজের
গ্রামে এসে পৌছাল। তারপর হেঁটে এলো নিজের বাড়ির সামনে। ইতোমধ্যে অনেককিছুই
পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কিন্তু একটি আমগাছ দেখে সে থমকে গেল। গাছটি ছিল তার অতি
প্রিয়। গাছের নিচে বসে সে বিগত দিনের নানা কথা মনে করতে লাগল। ঠিক সে সময়েই গাছ
থেকে বড় দুইটি আম তার কোলে পড়ল। উপেন খুব আগ্রহভরে আমগুলো খেতে যাবে এমন সময়
পেয়াদা তাকে ধরে জমিদারের কাছে নিয়ে গেল। জমিদার তখন বন্ধুদের সঙ্গে পুকুরে মাছ
ধরছিল সন্ন্যাসীবেশের উপেনকে সে চিনতে পারেনি কিন্তু পেয়াদার কাছে ঘটনা শুনে সে
তাকে ভীষণ তিরস্কার করল এবং চোর বলে ভর্ৎসনা করল। উপেন জমিদারের দিকে তাকিয়ে
পূর্বের নানা কথা মনে করতে লাগল। জমিদার কীভাবে তাকে ঠকিয়ে জমি আদায় করেছে সে
কথাও তার মনে পড়ল। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারল না। তার কেবল মনে হতে থাকল এ জগতে
যার যত বেশি ধনসম্পদ রয়েছে তার ধনসম্পদের ক্ষুধা তত বেশি। সে কারণেই তার মতো
দরিদ্র মানুষকে বঞ্চনা করতে জমিদার এতটুকুও কুণ্ঠাবোধ করেনি।