'রফিক মাস্টার' বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো:
রফিক মাস্টার
রফিক মাস্টার ইংরেজিতে অনার্স করেছেন দশ বছর হতে চলল। তিনি তাঁর গ্রামকে অনেক
ভালোবাসেন। পড়াশোনা শেষ করে তাই গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। গ্রামেই বিয়ে করেন।
তাঁর দুই সন্তান। গ্রামের স্কুলে চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু এখনকার
দিনে শুধু চেষ্টায় চাকরি হয় না। চাকরির জন্য দরকার বড় অঙ্কের টাকা, যা রফিক
সাহেবের সাধ্যের বাইরে। তেমন মামা-চাচাও নেই যার সুপারিশে অল্পের মধ্যে চাকরির
ব্যবস্থা করবেন। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়ানোর মাধ্যমে তাকে সংসার চালাতে
হয়। ছাত্র পড়িয়ে যে টাকা আসে তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে রফিক
মাস্টারের। সন্তানদের পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। তাই
শহরে গিয়ে কোনো কাজের চেষ্টা করা ছাড়া তাঁর কোনো উপায় থাকে না। এদিকে পৈতৃক
গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যেতেও মন সায় দেয় না। তবু তিনি স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে
রেখে শহরে যান চাকরির খোঁজে। তিনি একটি স্কুলে চাকরিও পেয়ে যান। কিন্তু চাকরিতে
ছুটির পরিমাণ কম এবং গ্রামে যাতায়াতও সহজ নয়। তাই তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে
শহরের বস্তিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করাটাকেই সুবিধাজনক মনে করলেন।
গ্রামে যে চালাঘরটি ছিল তা একদিন বিক্রি করে দিয়ে রফিক স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে
শহরে পাড়ি জমালেন। শহরের এক বস্তিতে স্থায়ীভাবে সংসার শুরু করলেন। এভাবে সময়
চলে যেতে থাকে। গ্রামে রফিক মাস্টারের অনেক ছাত্রছাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ
এখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। অনেক বড় হয়ে গেছে তারা। তারা যখন গ্রামে আসে
তখন রফিক মাস্টারের শূন্য ভিটে তাদের চোখে পড়ে। গ্রামের সদর রাস্তার পাশেই ছিল
রফিক মাস্টারের সেই টিনের চালাঘর। ছাত্ররা যখন তার পাশ দিয়ে হেঁটে যায় তখন
তাদের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। অধিকাংশ সময়ই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে তারা।
মাস্টারের শূন্য ভিটের দিকে তাকিয়ে তাদের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।