‘রক্তদানের পুণ্য’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
রক্তদানের পুণ্য
মহান শহীদ দিবসে শহীদ মিনারের পাদদেশে রক্তদান কর্মসূচি চলছে। শহীদ মিনারে
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে ডা. জাওয়াদ সেখানে। উপস্থিত হলেন। সেখানে দেখলেন
অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একটি সংগঠন কর্মসূচি
পরিচালনা করছে। ডা. জাওয়াদ এ সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি পাঁচবার
স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন।
ডা. জাওয়াদের স্বেচ্ছায় রক্তদানের শুরুটা ছিল অন্যরকম। এখনো তার স্মৃতিপটে
ভেসে ওঠে প্রথম রক্তদানের ঘটনা। তখন ডা. জাওয়াদ ফাইনাল সেমিস্টারের ছাত্র।
সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হোস্টেল থেকে
বের হতেই পেছন থেকে কেউ একজন ডাক দিলো, “বাবা শুনছ"। পেছন ফিরতেই চোখে পড়ল
পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলা। উদ্ভ্রান্তের মতো চোখ, একটি মলিন শাড়ি পরা মহিলাটিকে
দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কোনো অজানা বেদনায় বুকে পাথর চাপা দিয়ে আছে। চোখে মুখে
সেই বেদনার ছাপ স্পষ্ট। ঘুরে দাঁড়াতেই মহিলাটি দ্রুত পায়ে ব্যস্তভাবে ডা.
জাওয়াদের দিকে এগিয়ে এলো। জাওয়াদ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলে উঠল, “বাবা,
আমার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তার বলেছে যত দ্রুত সম্ভব রক্তের ব্যবস্থা
করতে। কোথায় যাব? কী করব? কিছুই বুঝতে পারছি না। একজন বলল ওই হোস্টেলের গেটে
গিয়ে খোঁজ করেন। অনেক ছাত্রই রক্ত দেয়। কিন্তু সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ
রাজি হচ্ছে না। ছেলেটা আমার লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত, রক্ত দিতে না পারলে বাঁচবে
না...” বলতে বলতেই কেঁদে ফেলল মহিলাটি। ডা. জাওয়াদ জিজ্ঞেস করলো, “কোন গ্রুপের
রক্ত লাগবে?” মহিলাটির সরল উত্তর, “এ নেগেটিভ।” ডা. জাওয়াদের রক্তের গ্রুপ ‘এ
নেগেটিভ।’ কিন্তু তিনি কখনো রক্ত দেননি। আর তাছাড়া একটু পরেই তার পরীক্ষা শুরু
হবে। মহিলাটির মলিন মুখ দেখে তার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মনে মনে ভাবেন,
‘আমার যদি এমন হতো তাহলে আমার মা-ও তো এভাবে ছুটে বেড়াতেন। যদি মা এভাবে ঘুরে
রক্তের ব্যবস্থা করতে না পারেন তাহলে মায়ের মনের হাহাকার কে শুনবে?’ ভাবতেই
চোখের কোণে অশ্রু জমে যায় ডা. জাওয়াদের। মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নেন তিনি মহিলার
সাথে রক্ত দিতে যাবেন।
রক্ত দিয়ে একটি রিকশা নিয়ে পরীক্ষার হলের উদ্দেশ্যে রওয়া দিলেন তিনি। চোখের
সামনে বার বার ভেসে উঠছিল রক্ত যোগাড় করতে পারার আনন্দে তৃপ্ত একজন মায়ের
মুখ। পরীক্ষার হলে যতক্ষণে পৌঁছলেন ততক্ষণে একঘণ্টা শেষ। হলে ঢুকতেই দায়িত্বরত
শিক্ষক বললেন, “পরীক্ষার হলে আসতে এত দেরি কেন?” ডা. জাওয়াদ শিক্ষককে সব খুলে
বললেন। শিক্ষক সব শুনে খাতা দিলেন আর বললেন, “তুমি তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দেবে।
প্রয়োজনে আমি একাই তোমার পরীক্ষা নেব।” সেদিন থেকে ডা. জাওয়াদ সিদ্ধান্ত
নিলেন নিয়মিত রক্ত দেবেন। শহীদ মিনারের পাদদেশে রক্তদান কর্মসূচিতে দেখলেন
স্বেচ্ছায় রক্তদানের জন্য দীর্ঘ লাইন। ডা. জাওয়াদের চোখে একটা আনন্দের ঝিলিক
খেলা করে গেল । মনে ভেসে উঠল অসংখ্য মায়ের মুখ।