ভাষণ : সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়

‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার জন্য একটি ভাষণ রচনা কর।

অথবা, ‘সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের উপযোগী একটি ভাষণ তৈরি কর।

‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা

শ্রদ্ধেয় সভাপতি, উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ও সুধীমণ্ডলী, আসসালামু আলাইকুম। ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়’ শীর্ষক আজকের এই জনগুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভার ব্যবস্থা করায় আমি প্রথমেই আয়োজকদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।

সুধীমণ্ডলী,
আজ আমাদের মাতৃভূমি এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সমাজের চারদিকে আজ বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস, সর্বোপরি অরাজকতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক হানাহানির ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দুঃসহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। তাই দেশটা আজ ন্যুব্জ, কলঙ্কিত। এতে করে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে, সর্বোপরি বিশ্বদরবারে আজ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থা আর চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না।

সুধীবৃন্দ,
আপনারা জ্ঞাত আছেন, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়’। নিঃসন্দেহে একটি যুগোপযোগী ও জ্বলন্ত বিষয়কে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা হয়েছে। এজন্য আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার পূর্বের বক্তারা কেউ কেউ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কী রূপ ধারণ করেছে, তার চিত্র তুলে ধরেছেন। কেউ বা আবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কেন ছড়িয়ে পড়ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করেছেন। আমি আর সেদিকে যাচ্ছি না। আমি বরং সাম্প্রদায়িকতা কী এবং কীভাবে আমরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতামুক্ত সমাজ তথা বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি, সেই সম্পর্কে দুটি কথা বলতে চাই।

বন্ধুগণ,
যে সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষের হলাহল থেকে বেঁচে থাকার প্রয়াসে ভারতবর্ষ ভেঙে পাকিস্তান, তারপর পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস— আমরা আজও সেই হলাহল থেকে মুক্তিলাভ করিনি। প্রকৃত প্রস্তাবে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা দুটি স্বতন্ত্র বিষয়। ধর্মের লক্ষ্য মানবিক কল্যাণ; সাম্প্রদায়িকতার লক্ষ্য অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ এবং বৈষয়িক স্বার্থ হাসিল। ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বিচ্ছিন্নতাই সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মূলকথা। প্রেম, মৈত্রী ও করুণা সব ধর্মেরই মূলকথা— যা সব ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরোধী। সাধারণভাবে একই সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ অভিন্ন— এই ধারণা থেকেই সাম্প্রদায়িকতার, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উৎপত্তি। এই মনোভাব সংকীর্ণ স্বার্থবুদ্ধি প্রণোদিত। কোনো সুস্থ চেতনাসম্পন্ন মানুষ, সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা তা বরদাস্ত করতে পারে না। তাই এ প্রবণতা, অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এক অমার্জনীয় অপরাধ।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
ধর্মের নামে গড়ে তোলা পাকিস্তানি রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতাকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ অর্জন করেছে তার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের স্বপ্ন স্বাধীনতার সোপান হলেও স্বার্থান্বেষীদের নানা চক্রান্ত আজ সে গৌরবকে কালিমালিপ্ত করছে। স্বাধীনতার সোপানের, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এ অপচেতনা ও গর্হিত কর্মের কোনো ক্ষমা নেই। আপনাদের সবার প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে এ দুষ্কর্ম ও দুষ্টচক্রকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। প্রতিটি মানুষকে যথার্থ শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে হবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যথার্থ প্রতিকারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের এ বাংলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঠাঁই নেই।

পরিশেষে, এই জনগুরুত্বপূর্ণ সুন্দর অনুষ্ঠানটি যারা আয়োজন করেছেন এবং নেপথ্যে থেকে সুচারুভাবে যারা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন, তাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের আবারও শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজ আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হোক, সকল প্রকার সহিংসতা নিপাত যাক, মানবতা মুক্তি পাক।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post