সমুদ্র কন্যা সেন্টমার্টিন ভ্রমনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার দেখতে এসেছিলাম। দাদাভাই বললেন দুটো দিন
থেকে সমুদ্রকন্যা সেন্টমার্টিন দেখে যেতে। কক্সবাজার থেকে দাদাভাই আমাকে নিয়ে টেকনাফের বাসে উঠলেন। জাহাজঘাট থেকে আট ঘণ্টা পরপর সেন্টমার্টিনের
উদ্দেশ্যে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ছাড়ে। আমরা একটি ট্রলারে উঠে বসলাম।
সেন্টমার্টিনকে স্থানীয়রা বলে নারিকেল জাজিরার বা নারিকেল জিঞ্জিরা। জাজিরা বা
জিঞ্জিরা আরবি শব্দ অর্থ দ্বীপ। পাহাড় সমান উঁচু এক একটা ঢেউ আমাদের দিকে ছুটে
আসছিল। ট্রলারের মাঝি অবিশ্বাস্য দক্ষতার মধ্য দিয়ে পথ বের করে চলছিল। ঢেউ এর
ঝাপটার জলকণা আমাদের শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছিল। কি যে রোমাঞ্চকর অনুভূতি, প্রকাশের ভাষা
নেই। আমার ভিত বিহ্বল অবস্থা দেখেই বোধকরি লোকজন বলাবলি করছিল, সমুদ্র এখন খুবই
শান্ত। তাছাড়া ট্রলারটি নাকি অতল উত্তাল সমুদ্র দিয়ে নয়, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন
এর মধ্যকার নিরাপদ নৌরুট বাংলা চ্যানেল দিয়ে চলছে। শীঘ্রই ট্রলারের গতি মন্থর
হয়ে আসায় কিছুটা দূরে গভীর নীল জমিনের বুকে প্রগাঢ় সবুজের দ্বীপের মতো ছোট্ট
একটি ভূখণ্ড দৃষ্টি গোচর হল। কেউ না বললেও বুঝলাম এটিই সমুদ্রকন্যা সেন্ট
মার্টিন। দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে মুগ্ধ মন সহজেই বলে উঠলো, সিন্দুর টিপ
সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সেন্টমার্টিনের তীরে পৌঁছে তো আমি রীতিমত অবাক হতবাক। সচরাচর
নদী, সমুদ্র গভীর পানির নিচে সাদা বালুর আস্তর চোখে পড়ে। কিন্তু সেন্টমার্টিনে
তো দেখি বাহারি রঙ্গিন পাথরের স্বপ্নরাজ্য! দাদাভাই বললেন, সেন্টমার্টিন
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। পানির নিচে যে নানান রঙের বর্ণিল ছটা দেখা
যাচ্ছে তা মৃত প্রবাল। মাথার উপরে এতো বড় আর এতো বিস্তর নারিকেল বীথি আমি জীবনে
আর কোথাও দেখিনি। চারপাশে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। কয়েক বর্গ কিলোমিটার
এই দ্বীপটি অল্প সময়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। তবে মূল দ্বীপের দক্ষিণাংশে আরেকটি দিক
মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। সে দ্বীপটিকে স্থানীয়রা বলে ছেড়া দ্বীপ। সেন্টমার্টিন
দ্বীপ ঘুরতে ঘুরতে দুপুরের খাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আতপ
চাল রান্না শুটকির তরকারিতে আমি ইতস্তত করছি দেখে হোটেল ওয়ালা খাস
নোয়াখালীর ভাষায় বাঙালি খাবার খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে বসলো। বিশ মিনিটে বাংলা
চ্যানেল পাড়ি দিয়ে টেকনাফ ঘাটে যখন নামলাম, তখনও আমি সেন্টমার্টিনের মায়ার
ঘোরে রয়েছি। আজ কতদিন সেন্টমার্টিন ছেড়ে এসেছি। কিন্তু ভাবলে মনে হয়, এইতো
সেদিন সমুদ্রকন্যা সেন্টমাটিন তার নানা বর্ণিল রুপে আমায় যারপরনাই মুগ্ধ আবিষ্ট
করে রেখেছিল।