সীতাকুন্ড পাহাড়ে পথ হারানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
পাহাড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন আমার বহুদিনের। অবশেষে এক ফেব্রুয়ারিতে সেই স্বপ্ন
পূরণের সুযোগ এসে গেল। আমরা দুই বন্ধু পাহাড়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সীতাকুন্ড
পৌঁছালাম। সিদ্ধান্ত নিলাম পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠবো। যেই ভাবা সেই কাজ। সকাল
আটটার দিকে রওনা হলাম এবং দশটার দিকে পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছলাম। দেখি পায়ে চলার
পথ রয়েছে এবং দু’একজন জন পর্যটক চলছেন পাহাড় ভ্রমণের। আমরাও নতুন উদ্যমে
পাহাড়ে চড়া শুরু করলাম। এক পায়ে চলার পথ। কোথাও আবার এতটাই সংকীর্ণ যে একজন
সোজাভাবে হাঁটাও সম্ভব নয়। পাহারের শরীর কেটে কেটে এ পথ তৈরি করা হয়েছে। এই
চড়াই-উৎরাই পার হতে একটুতেই হাঁপিয়ে উঠতে হয়। সকালে নাস্তা করা হয়নি নতুন কে
আবিস্কার করার উত্তেজনায়। এখন তার মজা টের পাচ্ছি। তা আর চলে না এমন অবস্থা।
পাহাড়ের চূড়ায় শুনেছি হোটেল রয়েছে সে ভরসায় চলছি। কাঁধে ঝোলানো ক্যামেরাটি
মনে হচ্ছে ১০০ কেজি ওজনের কিছু। অবশেষে বেলা একটার দিকে আমরা একটি চূড়ায় পা
রাখলাম। সেখানকার হোটেলের রুটি সবজি খেয়ে তখনকার মতো জান বাঁচালাম। চোখ ঘোরালাম
চারপাশে, কি অপরূপ দৃশ্য! অনির্বচনীয় ভালোলাগা সমস্ত সত্তাকে আচ্ছন্ন করে
রেখেছিল। সন্ধ্যার আগে ফিরতে হবে তাই তাড়াতাড়ি ফেরার পথ ধরলাম। পাহাড়ে উঠতে
যতটা পরিশ্রম নামতে তার চেয়ে বেশি ছাড়া মোটেই কম নয়। খুব সন্তর্পণে আমরা নিচের
দিকে নামছিলাম। কিন্তু ভাগ্য আমাদের সহায় ছিলনা। দল থেকে কখন বিচ্ছিন্ন হয়েছি খেয়াল করেনি। আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। গাছের শিকড় ধরে ধরে নিচে নামার চেষ্টা
করছি। প্রায় ৫০০ ফুটের মতো নেমে দেখি কোন রাস্তাই নেই। ওদিকে সন্ধ্যা হতে আর
বেশী দেরী নেই। বন্ধুকে বললাম, এখন একমাত্র উপায় কারো সাহায্য গ্রহণ করা। কিন্তু
সেখানে আবার ছিনতাইকারী দৌরাত্ম্যও রয়েছে। আমরা আবার পাহাড়ের চূড়ার দিকে উঠতে
লাগলাম। পথিমধ্যে দুজন লোকের সঙ্গে দেখা হলো। আমাদের সমস্যাটা তাদের জানালাম।
তারা আমাদের সঙ্গে নিয়ে চলল। জানতাম না তাদের সাথে যাওয়াটা আদৌ উচিত হচ্ছে
কিনা। তারপরও উপায়হীন ভাবে চলছিলাম। অবশেষে রাত দশটার দিকে আমরা স্টেশনে
পৌঁছলাম। সেই অভিজ্ঞতা আমি কখনোই ভুলবো না।