সিডরের রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
সেদিন ছিল ১৫ নভেম্বর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মুহুমুর্হু জনমনে ভীতি ও উৎকণ্ঠার
মাত্রা চলছিল। সন্ধ্যা থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল দমকা বাতাসের সঙ্গে।
আমার মনেও উৎকণ্ঠা ও চাপা উত্তেজনা। রাত ৯ টার দিকে বাতাসের বেগ ক্রমশ বাড়ছিল।
আমাদের গ্রামটির পশ্চিমদিকে চিত্রা নদী প্রবাহিত। পশুর নদীর শাখা নদী এটা, জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামের মহিলা শিশু ও বৃদ্ধদের
স্থানীয় সাইক্লোন সেন্টারের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ঘরটি অপেক্ষাকৃত
মজবুত তাই বেশ কয়েকটি পরিবার আমাদের ঘরে অবস্থান করছে। রাত এগারোটার দিকে শুরু
হল ঝড়ের তান্ডব। চারদিকে একটানা শস্য আওয়াজ এবং বিদ্যুতের চমক মনে হচ্ছিল
প্রকৃতির বীভৎস অট্টহাসি। জানালা দরজা বন্ধ করে সবাই ঘরে বসে সৃষ্টিকর্তার নাম
স্মরণ করছে। চারদিকে গাছের ডাল ভাঙ্গার বিকট শব্দ ভীতির মাত্রা আরো বাড়িয়ে
তুলছিল। হঠাৎ শুনি কয়েকটি কন্ঠের তীব্র চিৎকার। তখন দু'জন প্রতিবেশী ভাইকে
সাথে নিয়ে হাতে দা, কুড়াল, দড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম প্রবল ঝড়ের মধ্যেই ওই
চিৎকারকে উদ্দেশ্য করে। সেখানে পৌঁছে দেখি আমাদের সেই প্রতিবেশী ঘরের উপর বিশাল
আকারের আম গাছ ভেঙে পড়েছে এবং ঘরের ভেতর কয়েকজন আটকা পড়েছে। মাটির সাথে মিশে
যাওয়া ঘরটির টিনের চাল কেটে দুজনকেই উদ্ধার করলাম। ঘরের ভিতরে খাটের তলায়
আশ্রয় নেওয়ার জন্য তারা অক্ষত ছিল। হঠাৎ দেখি বাড়ির উঠানে পানির স্রোত,
তাড়াতাড়ি ওদেরকে আমাদের ঘরে তুলে দিয়ে অন্যদের উদ্ধারের জন্য বের হলাম।
কিন্তু পানি তীব্রভাবে ঘরে প্রবেশ করছে, তাই বাধ্য হয়ে ফিরতে হল। রাত প্রায়
তিনটার দিকে বাতাসের বেগ কমে এলো। পানিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করল। সারা রাতটা
কাটিয়ে ভোর হতেই বেরিয়ে পরলাম। সে কি বীভৎস দৃশ্য! চারদিকে ধ্বংসস্তূপ,
পশুপাখির মৃতদেহ। সব মিলিয়ে এক ভয়াল অভিজ্ঞতা যা আমার চোখের পাতায় আটকে আছে।