“শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস” শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণ তৈরি কর।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস শীর্ষক আলোচনা সভা
আজকের এ মহতী অনুষ্ঠানের সম্মানিত প্রধান অতিথি, মঞ্চে উপবিষ্ট বিশেষ অতিথি,
উপস্থিত সচেতন ব্যক্তিবর্গ এবং দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার প্রিয়
ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আমি প্রথমে এমন একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠান
আয়োজনের জন্য আয়োজকদের বিশেষভাবে সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
‘সন্ত্রাস’ শব্দটি বর্তমান বিশ্বের সাথে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। দৃশ্যত
বর্তমান বিশ্ব সন্ত্রাসের নির্মম শিকার সন্ত্রাসের বিষাক্ত ছোবলে সমাজ রাষ্ট্র
তথা সমগ্র বিশ্ব আজ জর্জরিত। আর আমাদের দেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিক্ষাঙ্গনগুলো হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসের একটি অবাধ
চারণক্ষেত্র। সন্ত্রাসের করাল গ্রাসের শিকার হয়ে অসংখ্য সুন্দর জীবন বিপথগামী
হয়ে যাচ্ছে। আজকের ছাত্রসমাজই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। আর দেশ ও জাতির
সুযোগ্য পরিচালনার প্রস্তুতিক্ষেত্র হচ্ছে আমাদের শিক্ষালান। কিন্তু তথাকথিত
রাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠছে রণক্ষেত্রে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা যে শুধু
নিজেদের জীবন ও ভবিষ্যৎকেই বিপন্ন ও বিপথগামী করে তুলছে তা নয়; বরং তাদের এ
হঠকারিতার ফলে সমাজ, দেশ ও জাতির ভবিষ্যও অনেকাংশে আশাহীন ও বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়— সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা
প্রকার অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার আর অসাম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজই সবচেয়ে
সোচ্চার ও আপসহীন ভূমিকা পালন করেছে। তাই জাতি স্বাভাবিকভাবেই আশা করে এই
ছাত্রসমাজই সন্ত্রাস নামক এ বিশ্বশত্রুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে এবং
গঠনমূলকভাবে এর মূলোৎপাটনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের
বিষয়, যে ছাত্রসমাজকে সমাজ সন্ত্রাসমুক্তির দূত হিসেবে দেখতে চায় সেই
ছাত্রসমাজেরই একাংশ আজ সন্ত্রাসের সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর তাদের
দৌরাত্ম্যের ফলেই আজ কলঙ্কিত হচ্ছে পবিত্র বিদ্যাপীঠ। শিক্ষাঙ্গন পরিণত হচ্ছে
রণাঙ্গনে, যার বলি হচ্ছে নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের জীবন ও ভবিষ্যৎ।
যাহোক, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের উৎস, সংক্রমণ ও পরিণতি সম্পর্কে মাননীয় প্রধান
অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ ও অন্য বজ্রারা বিশেষ যৌক্তিকতার সাথে সারগর্ভ আলোচনা
করেছেন। তাঁদের সুরে সুর মিলিয়ে আমি একটি কথাই বলতে চাই, তা হলো শিক্ষাঙ্গনে
সন্ত্রাস আমাদের সার্বিক সন্ত্রাসের একটি নগ্ন বিস্তৃতি। তাই শিক্ষাঙ্গনকে
সন্ত্রাসমুক্ত করতে পারলে আমাদের সার্বিক সন্ত্রাসকে অনেকাংশে দুর্বল করা সম্ভব।
তাই সন্ত্রাস নির্মূলের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথমে শিক্ষাঙ্গনকেই সন্ত্রাসমুক্ত করার
দৃঢ়প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদেরকেই নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা আর
শিক্ষক-অভিভাবকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণাই এক্ষেত্রে
ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে বড় পাথেয়। সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনই হোক আমাদের
শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান স্লোগান– এই আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং সেই সঙ্গে সবাইকে
আবারও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমার এ বক্তব্য শেষ করছি। সেই সাথে আজকের এই
সভার সমাপ্তি ঘোষণা করছি।
খোদা হাফেজ।