স্মৃতির মণিকোঠায় সোনালি অতীত— শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখো।
স্মৃতির মণিকোঠায় সোনালি অতীত
জীবন এত সুন্দর হয়, মধুময় হয়, তা শুধু শৈশবেই বুঝা যায়। এখন হয়ত বড় হয়ে
গেছি, তাই বলে কি শৈশবের কথা কখনো ভোলা যায়! শৈশবের প্রতিটা মুহূর্ত মনে হয়
জীবনের রং বদলের পালা আর ঐ সময় শুধু মনে হয় জীবনের সবকিছু কত সুন্দর। মাঝে মাঝে
শৈশবের জানালায় উঁকি দিতেই মনে মনে ভাবি কেন ফিরে যেতে পারি না শৈশবের দিন
গুলিতে। মুগ্ধ হওয়ার মত অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে শৈশব কালে শৈশব কালে কত গাছে
গাছে ঝুলেছি মনে পড়ে জোনাকজ্বলা রাতে বাঁশবাগানে মাথার উপর সাদা থালার মতো
চাঁদের কথা মনে পড়ে মায়ের হাতে ভাত মাখিয়ে খোকনকে ডাক পাড়ার কথা। মনে পড়ে
চঁাদ মামা কপালে টিপ দিয়ে যাওয়ার কথা। আর কত শত শৈশবের মধুময় স্মৃতির কথা।
শৈশবে ছিল মায়ের মুখে শোনা সুয়োরানী দুয়োরানী,পাতালপুরীর রাজকন্যা, আর কতশত
রূপ কথার গল্প মালা। সময় থেমে নেই, এগিয়ে চলছে বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে। আমিও
থেমে নাই, বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠেছি। আজ অনেক বড় হয়ে গেছি, তার
পরেও মনে পড়ে শৈশবের কথা। শৈশব কালের সেই মধুময় স্মৃতির কথাগুলো মনে পড়তেই
থমকে দাঁড়াই। অনেক সময় শৈশবের কথা মনে পড়তে দুই নয়ন আমার অশ্রুতে ভিজে উঠে।
মনে পড়ে শৈশবে সেই লাটিম ঘুরানো, নাটাই সূতা দিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোর কথা। আমি শৈশব
কৈশোর কালে বেশ কিছু দিন গ্রামে কাটিয়েছি। আমার সাথে আমার মা থাকতেন এবং দাদি,
চাচা-ফুফু ছিলেন। বাবা চাকরি করায় তাকে শহরে থাকতে হত। আত্মীয়স্বজনদের
কলকাকলিতে আমাদের বাড়িটি ছিল মুখরিত। আমাদের বাড়ির পিছনে বাগান ছিল আর বাগানে
আম, কাঁঠাল, জাম, পেয়ারা, পেঁপে, আর কতশত ফল গাছ ছিল। সে ফল গাছ থেকে পেড়ে
খাওয়ার কত যে আনন্দ তা শুধু শৈশবের কথা মনে পড়লে বোঝা যায়। আমাদের পরিবারে আমি
ছিলাম সকলের আদরের। বিশেষ করে আমার দাদি আমাকে রাতে ঘুম পাড়াতেন নানান ধরনের
রাজপুত্রদের গল্প শুনাতেন। আমি সেই গল্পকে বাস্তব মনে করে ঘুমের ঘরে কল্পনায় কত
যে রাজ পালংকে শুয়েছি, পঙ্খিরাজে উড়ে বেড়িয়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না। খালের
পানিতে ভেসে থাকত কচুরিপানা আর সে কচুরিপানাতে যখন বেগুনী রঙের ফুল ফুটতো তা
চেয়ে চেয়ে অনুভব করতাম। কত ছোট ছোট তুচ্ছ জিনিস গুলোকে মনে হতো পৃথিবীর সব থেকে
মূল্যবান জিনিস। আজ যখন বড় হয়ে গেছি স্মৃতিগুলো আমাকে আপ্লুত করে। নিজের
অজান্তেই ফিরে যাই সেইসব দিনগুলোতে।