"সত্যবাদিতা'" শিরোনামে একটি ক্ষুদে গল্প লেখো।
সত্যবাদিতা
তখন বর্ষাকাল। স্বরগ্রামে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। জনমানব শূন্য চারিদিকে ব্যাঙের
গোঙালি শুধু কানে ভাসে। গ্রামের বাজারেও কয়েকটা ঔষধের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান
বন্ধ। বৃষ্টির দিনে এই গ্রামের লোকেরা কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাতে পছন্দ করে। একান্ত
প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হয় না। নুর ইসলাম ব্যাপারির বাড়ি বাজারের
ঠিক পাশেই। বাড়িতে তার স্ত্রী আর ছোট সন্তানটি ছাড়া তেমন কেউ নেই। তিনি
গিয়েছেন জেলা শহরে ব্যবসায়িক কাজে। তার বাড়ির সাথে লাগানো বাড়িটি হারুণ
পাঠোয়ারির। তিনি অবশ্য অশিক্ষিত, লাঠিয়াল ও কপট শ্রেণির লোক। গ্রামের সকলেই
তাকে দুরাচার বলেই সাব্যস্ত করে। এককালে তার বাবা জ্যাঠারা নদীতে মাছধরা ট্রলারে
ডাকাতি করে চলত। তাই ডাকাত পরিবারের লোক হিসেবে অনেকেই তাদেরকে ভয় করে। মুখ বুঝে
তাদের অন্যায় অনেকেই সহ্য করে যায়। বর্ষার এমন নিরবতার দিকটিকে হারুণ পাঠোয়ারি
হাতছাড়া করতে চায় না। নুর ইসলাম ব্যাপারির পুকুরে বৃষ্টির তোপে মাছগুলো কেমন
সরব হয়ে উঠেছে। কৈ, খলশে, চিংড়ি, শোল মাছের মতো সুস্বাদু মাছে ভর্তি পুকুরটি,
তাই পুকুরটি হারুণ পাটোয়ারির চোখে পড়ে। জনশূন্যতার সুযোগে সে তার
সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে পুকুরের অনেক মাছ ধরে নিয়ে যায়। নূর ইসলামের স্ত্রী টের
পেয়ে বাধা দিতে এলে তাকে মারতে আসে হারুণের চেলা-চামুণ্ডারা। চিল্লাচিল্লি আর
চেচামেচিতে অনেক লোক নিস্তব্ধতা ভেঙে জড়ো হলেও কেউ সাহস করে মুখ খোলে না। প্রচুর
মাছ ধরে নিয়ে উল্টো নূর ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে হারুন। মামলায়
স্বাক্ষী করা হয় গ্রামের তোরাপ, আলিম জাহাঙ্গীর ও সেলিমকে। আদালতে যাওয়ার আগে
সকল স্বাক্ষীকে ভালোভাবে শাসিয়ে নেয়, যেন তারা নুর ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী
দেয়। অন্যথায় সবাইকে ঘরছাড়া করার হুমকিও দেয়। তোরাপ আদালতে হারুন পাঠোয়ারির
পক্ষে মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর ও আলিমকে শিক্ষিত সেলিম সত্য
স্বাক্ষী দিতে উৎসাহিত করে। সেলিম তাদেরকে বলে যে, তারা যদি সত্য স্বাক্ষী দেয়
তাহলে সমাজের মানুষ নিরাপদ ও শান্তিতে থাকবে, হারুনের মতো দুরাচারের কবল থেকে
সবাই মুক্তি পাবে। আর মিথ্যা স্বাক্ষী দিলে নুর ইসলামের মতো নিরাপরাধ অসহায়
লোকটি বিপদে পড়বে এবং সমাজে অন্যায় আরো বেড়ে যাবে। তার কথায় সম্মত হয়ে
জাহাঙ্গীর ও আলিম আদালতে দৃঢ়তার সাথে সত্য কথা বলে। তারা হারুনের অত্যাচারী
সত্তার মুখোশ উন্মোচন করে। আদালত তাদের স্বাক্ষী আমলে নিয়ে মিথ্যা মামলা করায়
হারুণকে প্রেপ্তার করে জেলে প্রেরণ করে। মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়ায় তোরাপেরও এক
বছরের শাস্তি হয়। সত্য স্বাক্ষী দিয়ে সমাজের কল্যান করার সেলিম, জাহঙ্গীর ও
আলিমকে আদালতের বিচারক ধন্যবাদ দেন এবং প্রশংসা করেন।