‘স্বপ্নেও ভাবিনি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
স্বপ্নেও ভাবিনি
একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ নিজের নামটা কানের আসায় একটু চমকে উঠেই পিছন
ফিরে যাকে দেখলাম তাকে কখনো আবার দেখব স্বপ্নেও ভাবিনি। কেননা দীর্ঘ এতটা বছর
সে ছিল নিখোঁজ, আমার কাছে মৃত। আমি তাকে সেরকম ভেবেই চলে এসেছিলাম। ২০০৮ সালের
কথা। আমরা তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। শাহেদ ছিল আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। দুই ফ্যামিলির
সবাই মিলে আমরা গিয়েছিলাম রাঙামাটি, তারপর বান্দরবান। পাহাড়ের উপর দুটো কটেজ
ভাড়া নিয়ে আমরা বেশ আনন্দে ছিলাম। কোনদিন পাহাড়গুলোতে ঘুরতে বের হয়, কখনো ঝরনা
খুঁজি, কখনো গ্রামের মানুষের সাথে সারাদিন কাটাই। ওরা খুব ভালো, খুব
অতিথিপরায়ণ। আমরা যে উঁচু পাহাড়ে থাকি, তার পেছন দিক দিয়ে বয়ে গেছে ঝরনা, বেশ
স্রোত। আমি আর শাহেদ তৃতীয় দিন সকালে নাশতা সেরে ঘুরতে ঘুরতে পেছনে চলে
এসেছিলাম। এই অংশটা খাড়া নয়- ঢালু। গাছগাছড়া, জঙ্গল। ভেতরে আকাঁবাকাঁ পায়ে চলা
পথ গিয়ে মিশেছে পাহাড়ের কিনারে। এখানে বসে আমি ওপারের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে
ছিলাম। মনে হচ্ছিল কুয়াশা পড়ছে বা বৃষ্টি পড়ছে। রোদ পড়ে অপূর্ব লাগছিল। কতক্ষণ
এভাবে ছিলাম মনে নেই। হঠাৎ শাহেদের কথা মনে হতেই ওকে বললাম দেখ কী অপূর্ব
দৃশ্য! জবাব দিচ্ছে না দেখে পাশে তাকালাম। শাহেন নেই। জোরে জোরে ডাকলাম। পায়ে
চলা পথ ধরে এদিক ওদিক দেখলাম। নিচের ঝরার দিকে নজর দিলাম, কোথাও নেই। ভয় পেয়ে
ছুটতে ছুটতে চলে এলাম কটেজে। ম্যানেজারকে জানালাম। তারপর জানালাম সবাইকে।
ম্যানেজার নৌকা, জাল, লোকজন নিয়ে খুঁজতে শুরু করে দিল। ঝর্ণার এপার ওপারের
পাহাড় জঙ্গল, বড় গাছগাছড়া কিছুই বাদ গেল না। বড় মোটা সুতার জাল ফেলে টানা হলো,
নৌকা দিয়ে ঝরণার অনেক দূর পর্যন্ত খোঁজা হলো কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না ওকে।
কাঁদতে কাঁদতে চলে এলাম সবাই। অথচ এতদিন পর শাহেদকে পেয়ে জড়িয়ে ধরলাম, দুজনে
কাঁদলাম অনেকক্ষণ। শুনলাম কারা যেন ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। পাঁচ দিন আগে ছেড়েছে।
গত রাতে এসেছে ঢাকায়। বললাম, স্বপ্নেও ভাবিনি তোকে আবার দেখব।