‘স্বপ্নের চাবি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লিখ।
স্বপ্নের চাবি
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্সে প্রথম
শ্রেণিতে প্রথম হয়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে
নিয়োগ দিয়েছে। সহপাঠীরা আমাকে নিয়ে ঈর্ষা করে। তারাও হয়তো আমার বর্তমান
অবস্থানে আসতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। আমি পেরেছি। এ নিয়ে আমার আনন্দের সীমা
নেই। পত্রপত্রিকায় আমার এ কৃতিত্বের খবর বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে।
আজ আমার বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে আমি
প্রথম ক্লাস নিতে যাচ্ছি। কিন্তু নিজেকে কেমন যেন খুঁজে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে
এই তো সেদিন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলাম। পাসের পর ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার
জন্য নিরবচ্ছিন্ন পড়ালেখাও শুরু করলাম। এসব ভাবতে ভাবতে কখম যে সিঁড়ির কাছে
চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। হোঁচট লেগে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম সিঁড়ির গোড়ায়। উঠে দেখি
আমি চেয়ার থেকে নিচে পড়ে গেছি। পড়তে পড়তে টেবিলে মাথা দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি।
স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ার প্রথমে খারাপ লাগলেও একটা অজানা তৃপ্তি আমার সমস্ত
সত্তাজুড়ে খেলা করতে লাগল। কী দুর্দান্ত স্বপ্নটাই না দেখলাম। আঃ মনটা জুড়িয়ে
গেল! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, স্বপ্ন যখন আমি দেখেছি তখন তা পূরণের জন্য যা যা
করতে হয়, জীবন বাজি রেখে সেগুলো করব। স্বপ্নের চাবি যখন আমার হাতে তখন আমাকে
পেছনে পড়ে থাকলে চলবে না। আমার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি আর
অধ্যবসায় দিয়ে স্বপ্নের চাবিকে জীবনে জয়ী হওয়ার চাবিতে পরিণত করব এবং জয়ী আমি
হবই।
একই খুদে গল্প আবার সংগ্রহ করে দেওয়া হলো
রাতুল খুব সাহিত্যপ্রেমী একটি ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি তার অপরিসীম টান। সে যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে তখন প্রথম ঠাকুরমার ঝুলি পড়ে স্বপ্ন দেখতে শেখে। বইটি সে তার মায়ের বুকসেলফে পেয়েছিল। তারপর গোগ্রাসে গিলেছে সবগুলো গল্প। এরপর একের পর এক স্বপ্নময় গল্পের জগতে সে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে। সে যেন পেয়ে যায় এক অনবদ্য স্বপ্নের চাবি। সাহিত্যের অফুরন্ত ভাণ্ডারকে তার কাছে সত্যিকার অর্থেই এক স্বপ্নের চাবি বলে মনে হয়। যা তার সামনে উন্মোচন করে দেয় এক অশেষ স্বপ্নের ভাণ্ডার। বাংলা সাহিত্য যেন তার কাছে এক অমূল্য রত্ন। রাতুল যতই সাহিত্যের এই স্বপ্নময় জগতে প্রবেশ করতে থাকে ততই তার কাছে মনে হয় এই বুঝি পেয়ে গেছি এক রূপকথার অনন্ত রাজ্য। রাজপুত্র যেন পঙ্খীরাজ ঘোড়া নিয়ে টগ্বগ্ করে ছুটে চলেছে। আর যেন রাজকন্যাকে উদ্ধার করে আনছে দুরন্ত সাহসে। রাতুলের বন্ধুরা তার এই সাহিত্যপ্রীতি নিয়ে প্রায়ই মজা করার চেষ্টা করে। তাকে দেখলেই ওরা বলে— ওই যে আসছে সাহিত্যের বরপুত্র যে কিনা খুঁজে পেয়েছে স্বপ্নের চাবি। কেউ কেউ আরেকটু বাড়িয়ে বলে— কিরে রাতুল, তোর সেই স্বপ্নের চাবিটা আমাদের দিবি না? আমরাও একটু স্বপ্ন দেখি। রাতুল রাগ না করে ঠাণ্ডা গলায় বলে— স্বপ্নের চাবি কাউকে দেয়া যায় না, অর্জন করে নিতে হয়। তুই যদি সাহিত্য পড়িস তাহলেই পেতে পারিস সেই কাঙ্ক্ষিত চাবি। রাতুলের কথা শুনে সবাই হাসাহাসি করে। কিন্তু সে একটুও রাগ করে না। কারণ সে জানে, সে যা পেয়েছে তা অন্যরা কখনো উপলব্ধি করতে পারবে না।