"ট্রেন ভ্রমণে বিভ্রাট" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
ট্রেন ভ্রমণে বিভ্রাট
হঠাৎ করেই বড় রকমের একটা ঝাকুনিতে ঘুমটা ভেঙে গেল আদিলের। বরাবরই ট্রেন ভ্রমণে
তার তন্দ্রামতো হয়। ঘুম ভেঙে সে শুনতে পেল চারদিকে হৈ-হুল্লোর আর চিৎকারের শব্দ।
অনেক মানুষ একসাথে কোনো একটা বিষয়ে কথা বলছে। আদিল দেখল ট্রেনটা নির্দিষ্ট কোনো
স্টেশনে থেমে নেই। কোনো ঝামেলা হয়েছে বুঝতে পেরে ট্রেন থেকে নেমে দেখল তাদের
ট্রেনের সামনেই একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। একজন লোককে জিজ্ঞেস করল- 'ভাই এখানে কী
হয়েছে?' লোকটি বলল, 'সামনের ট্রেনের একটা বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। মালবাহী ছিল বলে
কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু লাইন থেকে ট্রেনের বগি সরাতে সময় লাগবে।
'গুরুত্বপূর্ণ একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতেই আদিল রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল।
পথিমধ্যে এ বিপত্তি তাকে চিন্তিত করে তুলল। উদ্ধার কাজে নিয়োজিত এক রেলকর্মীকে
সে জিজ্ঞেস করল- 'আচ্ছা ভাই কতক্ষণ লাগবে লাইন ঠিক করতে?’ লোকটি বলল- ‘চেষ্টা
করছি দেখা যাক কতক্ষণে ঠিক হয়।' এ কথা শুনে মনটাই দমে গেল আদিলের। অনেকদিন ধরেই
চাকরির চেষ্টা করছে আদিল। যে ইন্টারভিউ দিতে সে ঢাকা যাচ্ছে তাতে তার চাকরি হবার
একটা সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু ট্রেন সঠিক সময়ে না পৌছলে তার এই স্বপ্নটাও সত্যি
হবে না। এক ধরনের হতাশা তাকে ঘিরে ধরতে লাগল। সে বারবার এদিক সেদিক পায়চারি করতে
লাগল। একবার ভাবল বিকল্প কোন উপায়ে ঢাকা পৌছানো যাবে কিনা। কিন্তু অপরিচিত
জায়গা আবার এটা কোনো স্টেশনও নয় তাই অন্য উপায়ে যাবার চিন্তাটাও বাদ দিল।
অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। কিছু সময় পর রেলপোশাক পরা অন্য একজন
কর্মীর কাছে জানতে চাইল- 'ভাই আর কত সময় লাগবে লাইন ঠিক হতে?' লোকটি বলল দুই
ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। এই দুই ঘণ্টা সময় আদিলের কাছে দুই যুগ বলে
মনে হচ্ছিল। মানুষের কোলাহল, গরমের যন্ত্রণা, অপেক্ষার শাস্তি এসব কিছু মিলিয়ে
ঢাকা যাওয়ার সমস্ত আশা যখন ছেড়ে দিয়ে দূর্বলতা, হতাশা তাকে ঘিরে ধরছিল ঠিক সে
সময় আবারও ট্রেনের হুইসেল শোনা গেল। সবার সাথে আদিলও আবার ট্রেনে উঠে বসল। ট্রেন
আবারও ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল আদিলের গন্তব্যের দিকে।