খুদে গল্প : ভালোবাসা

'ভালোবাসা' বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :

ভালোবাসা

মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও মায়ের সেবা করার জন্য ভর্তি হয়নি শিলা। তার কাছে মা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাইতো, এত বড় সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও সেটি হাতছাড়া করতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ সে করেনি। ছোটবেলা থেকেই শিলার স্বপ্ন ছিল সে ডাক্তার হবে। সে মেধাও ছিল তার। ক্লাসের প্রতিটি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে সে প্রথম হতো। শিক্ষকদের প্রত্যাশা ছিল একদিন এই মেয়ে বড় কিছু একটা হবে। এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ এবং এইচএসসিতেও অনুরূপ ফলাফল করায় সে প্রত্যাশা পূরণের সম্ভাবনা আরো দৃঢ় হতে থাকে। স্বপ্ন পূরণে মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হয়। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে সে কৃতিত্ব অর্জন করে। মেডিকেল ভর্তি যখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, ঠিক এমন সময় ঘটে এক ঘটনা।

শিলার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। বড় ভাই আনোয়ার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কিছুদিন আগেই বড় ভাইকে বিয়ে করিয়ে নতুন ভাবি ঘরে আনে। ভাবি উচ্চ-বিলাসী ও খিটখিটে স্বভাবের। শিলার মাকে কোনোভাবে সহ্য করে না সে। সারাদিন ঠুনকো বিষয় নিয়ে অপমান আর তিরস্কার করে। মা নিরবে সয়ে যায় সবকিছু। কারণ তিনি এখন কর্মক্ষম নন। ছেলের আয়ের উপর নির্ভরশীল। ছেলে বউয়ের প্রতি দারুণ অনুরক্ত। তাই মায়ের সেবা যত্ন তার কাছে উপেক্ষিত। একদিন বাথরুমে পা পিছলে পড়ে যান শিলার মা। কোমরে মারাত্মক আঘাত পান। তার সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত হয় না। থেকে তিনি আরেকজনের সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারেন না। শিলার ভাবি এখন শ্বাশুড়িকে অতিরিক্ত আপদ মনে করে। আনোয়ারকে চাপ দেয় সে আর এক মুহূর্তও এ বাড়িতে থাকবে না। মা অথবা স্ত্রী যেকোনো একটি তাকে বেছে নিতে হবে। অসহায় মাকে রেখে অগত্যা বউয়ের আঁচলে বাঁধা পড়ে আনোয়ার। অসুস্থ মায়ের সেবা যত্ন করার শিলা ছাড়া আর কেউ থাকে না। মায়ের সাথে থাকার জন্য বিসর্জন দিতে হয় শিলার মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন। এতে শিলা মোটেই অখুশী হয় না। মায়ের সেবা করাটাকেই ডাক্তারি পেশার চেয়ে বড় ব্রত মনে করে শিলা।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post