"ভ্রমণ স্মৃতি" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
ভ্রমণ স্মৃতি
আমি আর আমার তিন চার বন্ধু মিলে একবার ঠিক করলাম সুন্দরবন দেখতে যাব। আমরা সবাই
এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় বসে গল্পের বই পড়ে আর টিভি দেখে সময়
কাটাচ্ছিলাম। আমাদের মধ্যে কালাম সবচেয়ে দুরন্ত, সারাদিন কাজের মধ্যে সে বলতে
গেলে শুধু ক্রিকেটটাই খেলে, আজাদ অনেকটাই গোছাল, সে বাসায়ই ছোটো ভাইটাকে নিয়ে
থাকে আর মনজু সারাদিন আমার সাথেই ঘুরে বেড়ায়। একদিন হঠাৎ করে আমরা সুন্দরবন
বেড়াতে যাবার প্ল্যান করলাম। কিন্তু আমাদের মা-বাবারা তা মেনে নেবেন কেন?
তাছাড়া টাকাই বা পাব কোথায়? এসব নিয়ে সবাই টুকটাক ভাবতে শুরু করলাম। প্রথমে
যাওয়ার জায়গা ঠিক করতে হবে। সবাই মিলে সে আলোচনাই করতে লাগলাম। কালাম সমুদ্র
দেখার প্রস্তাব দিল। কিন্তু কক্সবাজার অনেক দূর, অত দূরের রাস্তা কেউই চিনি
না। কেউই এ ব্যাপারে ইতিবাচক কিছু বলতে পারলাম না। অগত্যা পরিকল্পনাটি বর্জন
করতে হলো। কালাম মুখ গোমড়া করে আমাদের মাঝখানে বসে রইল। তারপর আবার আলোচনা
শুরু হলো। এবার একটা বিষয়ে একমত হওয়া গেল— সেটি হলো আমরা কাছাকাছি কোনো
ঐতিহাসিক স্থানে বেড়াতে যাব। ঠিক হলো নাটোর গণভবন ও রাজবাড়ি দেখতে যাব। এখান
থেকে শখানেক কিলোমিটার হবে। কিন্তু টাকা পাব কোথায়? মন্জু বাড়িতে বলে দেখার
প্রস্তাব দিল। কিন্তু আজাদ তাতে সায় দিল না। কারণ বাড়িতে টাকা পাওয়ার
সম্ভাবনা খুবই কম। দুশ্চিন্তায় পড়লাম আমরা, সব ঠিক কিন্তু টাকা কোথায় পাই।
চট্ করে একটা ফন্দি মাথায় খেলে গেল। আমরা চারজন ক্রিকেট খেলার জন্য একটা তহবিল
গড়েছিলাম। প্রতিদিন সবাই কমপক্ষে দু'টাকা করে রাখতাম তাতে। প্রায় একবছর টাকা
রেখেছি। সুতরাং, অঙ্কটা খুব খারাপ হবে না। চটপট তহবিল ভেঙে ফেললাম— দুহাজার
তিনশ বাইশ টাকা বেরোল। হিসাব করে দেখলাম তিন হাজার টাকা হলে ট্যুরটা ভালো হবে।
তখন সবাই ব্যক্তিগত তহবিল— মানে মাটির ব্যাঙ্কে হাত দিলাম। সব ভেঙেচুরে যা
দরকার তারচেয়ে বেশিই টাকা পাওয়া গেল। কিন্তু সমস্যা একটাই বাড়িতে কীভাবে
বলি? শেষমেষ সিদ্ধান্ত হলো কেউই বাড়িতে জানাব না। জিজ্ঞেস করলে বলব 'আজ
সারাদিন মাঠে খেলা আছে। নির্দিষ্ট দিনে সবাই মিলে বের হলাম। সবার মধ্যেই একটা
এ্যাডভেঞার কাজ করছিল। কারণ না বলে এই প্রথম আমরা বাড়ি থেকে বের হয়েছি। যা
হোক, নাটোরের সব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো আমরা দেখেছিলাম। মুগ্ধ হয়েছিলাম নাটোরের
ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি কাঁচাগোল্লা খেয়ে। ফেরার সময় ওই পুরোনো দিনের ঐতিহাসিক
স্থাপনাগুলোর কথা আমার মনে পড়ছিল। এগুলো যেন বার বার আমায় হাতছানি দিয়ে
ডাকছে। যে অভিজ্ঞতা সেদিন আমার হয়েছিল তা এখনো আমার মনে জ্বলজ্বল করে। আমরা
চার বন্ধু আজও এক জায়গায় হলে সেদিনের সেই সুখময় স্মৃতিকে রোমন্থন করি।