"ভূমিকম্পে আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধার" শিরোনাম একটি খুদে গল্প রচনা করো।
ভূমিকম্পে আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধার
কিছুদিন আগে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা। বহুদিনের
ইচ্ছে ছিল নেপাল যাওয়ার। এবার সে ইচ্ছে রাস্তবে রূপ নিল। এখানে বলে রাখা ভালো,
আমরা সড়ক পথে নেপাল গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ থেকে সড়ক পথে ভারত হয়ে নেপাল যেতে
হয়। যাবার সময় অপরিচিত জায়গাগুলোর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আমার হৃদয়কে হরণ
করেছিল। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর একটি হোটেলে উঠলাম আমরা। খানিক বিশ্রাম করে
বিকেলে বের হলাম শহর দেখতে। কাঠমান্ডু প্রাচীন শহর। অনেক পুরাকীর্তি আছে এ
শহরে। এসব জিনিস দেখলে কেমন যেন একটা উদাসভাব তৈরি হলো আমার মনে। কাঠমান্ডুর
মন্দির ও স্থাপনাগুলোর সূক্ষ্মকারুকাজ আমাকে বিস্ময়াভিভূত করেছে। শহর দেখা
শেষে রাতের খাওয়া সেরে আমরা আবার হোটেলে ফিরে এলাম। রাতে দারুণ ঘুম হলো। সকাল
প্রায় দশটায় রুম বেয়ারার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। সবাই মিলে জলখাবার খেয়ে
বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগলাম। হোটেল থেকে বেরিয়ে জানতে পারলাম সত্যজিৎ
রায়ের ফেলুদা সিরিজের যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে' সিনেমার কিছুটা শুটিং আমাদের
হোটেলের বাইরে হয়েছিল। বেলা যখন ১২টা বেজে খানিকটা পার হয়েছে তখন মনে হলো
পায়ের নিচে কী যেন নড়ে উঠল। মূহূর্তেই বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প শুরু হয়েছে।
সবাই মিলে তখনি ছুটে বের হয়ে সামনের ফাঁকা মাঠে গিয়ে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে
ভূমিকম্প তার তাণ্ডব দেখাতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মানুষের আর্তনাদে ভরে
উঠল চারপাশ। দেখতে না। (আশপাশের অনেক ভবন ধসে পড়ল। মানুষের কান্না আর চিৎকারে
ভারি হয়ে এলো বাতাস। চারিদিকে যেন এক ধ্বংসযজ্ঞ চলে। পেলাম। কিছুক্ষণপর
ভূমিকম্প থেমে গেল ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধার করতে এগিয়ে গেল
অনেকে। খানিকটা তার যা দেখলাম, তা আমার মধ্যে এক নরকযন্ত্রণার সৃষ্টি করল। কারো
হাত কারো পা, কারো বা শরীরের অন্য কোনো অংশ মায়ে হয়ে গেছে। ইট, কাঠ, লোহার
ধ্বংসস্তূপে অসংখ্য মানুষের নিষ্প্রাণ দেহ পড়ে আছে। যারা বেঁচে আছে তাদের
উদ্ধার করতে নিচু এসেছে দমকল বাহিনী ও সাধারণ মানুষ। অঙ্গহীন অবস্থায় দু-একজন
করে জীবিত মানুষ বের করছে তারা। হাসপাতাল দেখ অ্যাম্বুলেন্সে করে সঙ্গে সঙ্গে
তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার সামান্য আঘাত পেয়েই বেঁচে
বেরিয়েছে। যে খালগ্রামরা জীবন বাঁচাতে দাঁড়িয়েছিলাম সেখানেই লাশগুলো জড়ো
করা হয়েছিল। পরে জেনেছিলাম ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল জন। শুধু নেপালেই
মানুষ মারা গিয়েছিল ৮ হাজারের ওপরে। শুধু তাই নয় পার্শ্ববর্তী ভারতের কিছু
অংশে, তিব্বতে ও বাংলাদেশেও ট্রিকম্প আঘাত হেনেছিল। অবশ্য নেপালের মতো তাণ্ডব
এসব স্থানে হয়নি। কিন্তু তারপরও বেশকিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। সে দনের সবকিছু
যেন এখনও আমার মনে জীবন্ত হয়ে অবস্থান করছে। চোখ বুজলেই আমি সে ভয়ঙ্কর দৃশ্য
দেখতে পাই।