২৫শে মার্চ রাতের ভয়াবহতা সম্পর্কে একজন তরুণের দিনলিপি লেখ।
২৭ মার্চ,১৯৭১
নির্ঘুম রাত কাটল। খুব ভোরে উঠে বাশারকে নিয়ে বাইরে বের হলাম আজ সকালে কারফিউ
নেই। দুপুর থেকে আবার শুরু হবে। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ হাজার হাজার লোক
রেল-লাইনের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সবার চোখে মুখে মৃত্যু ভয়। আমরা আউটার
সার্কুলার রোডে হোটেল ‘দ্যা প্যালেস’এর সামনে একটা লাশ দেখে প্রথমে চমকে উঠলাম।
তারপর রাজারবাগের দিকে এগিয়ে দেখলাম অসংখ্য লাশ। রক্ত শুকিয়ে জমাটবদ্ধ হয়ে আছে।
দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ ব্যারাক থেকে তখনও ধোঁয়া উঠছে। লাশ আর রক্তের গন্ধে
বাশার বমি করল। ওর মাথায় পানি দিতে চাইলাম, সম্ভব হলো না, কলাতলি বেশ দূর। রুমাল
ভিজিয়ে এনে ওর চোখ মুখ মুছিয়ে দিলাম। একটু সুস্থ বোধ করলেই ওকে নিয়ে দুপুরের আগে
বাসায় ফিরলাম বাসায় ফেরার অল্পক্ষণ পর আমার সেন্ট গ্রেগরির ফ্রেন্ড সালেক এলো
আর্মির পোশাকে, সঙ্গে তার বন্ধু ক্যাপ্টেন মাহমুদ। ওদের মুখে ক্যান্টনমেন্টের
ভয়াবহ অবস্থার কথা জানলাম। মা ওদের অনেক জোর করলেন খেয়ে যাওয়ার জন্য। ওরা খেল না।
আমার জামা কাপড় পরে ছদ্মবেশে বের হলো কারফিউ শুরু হওয়ার আগেই শহর ছেড়ে পালিয়ে
যাওয়ার জন্য। তারপর কারফিউ শুরু হলো। শহরময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আর বাইরে যাওয়া
হলো না।
আজাদ
৩৯, বড় মগবাজার, ঢাকা।