নবান্ন উৎসব উদযাপনের ওপর একটি দিনলিপি লেখ।
৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪২৫
বগুড়া।
নবান্ন শব্দটি অনেক শুনেছি। শুনেছি এটি একটি শস্যভিত্তিক লোকউৎসব। কিন্তু এ উৎসব
কখনো দেখিনি। তাও বগুড়ার একটি গ্রামে আমার বন্ধুর বাড়িতে এসেছি। দেখছি ঢেঁকিতে
নতুন চাল ‘গুড়ি’ করা হচ্ছে। রোদে শুকানো হলো সেই চালের গুঁড়ো। ৮-১০টা বড় নারকেল
কোরানো হলো। ওদিকে একটি বড় পাতিলে দুধ জ্বাল দেওয়া হলো, আর একটি পাতিলে সুজি। ঘন
দুধ, সুজি, কোরানো নারকেল আর খেজুরের গুড় একত্রে মিশিয়ে তৈরি করা হলো পাটিসাপটা
পিঠা। একে একে তৈরি হলো ভাপা পিঠা, চিতই, পুলি, রসের পিঠা, ক্ষীর, পায়েস ইত্যাদি।
পৌষের সকালে সেগুলো পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে বিতরণ করা হলো এ বাড়িতেও এলো নবান্নের
নানা রান্নার সামগ্রী। মাদুর বিছিয়ে আমাদের বসতে দেওয়া হলো। থালায় সাজিয়ে
দেওয়া হলো নানা রকম পিঠা, ক্ষীর, পায়েস। গ্রামের সহজ-সরল মানুষ কী আনন্দে মেতে আছে!
নানা গল্প-গুজবে, গানে গানে মুখর গ্রামের মানুষ। তাদের মুখে মুখে সব বাড়ির রান্নার
প্রশংসা। বিকেলে শুরুর হলো জারিগান, তারপর পালাগানের আসর। আনন্দ আর ঐতিহ্যের গর্বে
আমার মন ভরে গেল। সত্যিই নবান্ন উৎসবের তুলনা হয় না। প্রাণের ভেতর থেকে বেরয়ে
এলো- যুগ যুগ বেঁচে থাকো বাংলার নবান্ন উৎসব।