ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা
কর।
ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম, ৫জুন, ২০১৮, সকাল ১০টা।
৩ জুন, ২০১৮ : প্রকৃতির নির্মম আঘাতে ক্ষতবিক্ষত উপকূল অঞ্চল চট্টগ্রামের
অন্তর্গত সসন্দ্বীপ থানায় আমরা ত্রাণসামগ্রী দিয়ে যাই। উদ্দেশ্য ছিল উপদ্রুত
এলাকায় ত্রাণ বিতরণ এবং বিপর্যস্ত জনতার ওপর প্রতিবেদন তৈরি করা। সেখানে পৌঁছে যে
ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি তা এক কথায় বর্ণানাতীত তথা হৃদয়বিদারক। প্রকৃতি
যেন চরম আক্রোশ রুদ্রমূর্তিতে এ জনপদের উপর ফেটে পড়েছিল। মাইলের পর মাইল
যেন বিরানভূমি। ঘরবাড়ির কোন অস্তিত্ব নেই। রাস্তার পাশে পড়ে আছে অবুঝ শিশুর লাশ।
যে লাশ নিয়ে কুকুর শিয়ালের টানাটানি, হানাহানি। প্রকৃতির আঘাতে মানুষ এতই
বিপর্যস্ত,নিঃস্ব হয়ে পড়েছে যে, কারও পক্ষে লাশ দাফন করা সম্ভব হয় নি। আর কয়টাইবা
লাশ দাফন করবে? এখানে-সেখানে পড়ে আছে অসংখ্যা মানুষের ক্ষতবিক্ষত লাশ। যত্রতত্র
পড়ে আছে গবাদি পশুর মৃতদেহ। ক্ষুধার্ত, নিঃস্ব, অসহায়, বুভুক্ষ মানুষ জাহাজঘাটায়
তীর্থের কাকের মতো বসে আছে কখন ত্রাণ আসবে। থেমে থেমে, এখান-ওখান থেকে ভেসে আসছে
নারীদের বিলাপ, পুরুষের আহাজারি। প্রকৃতির নির্মম আক্রোশ কীভাবে বনি আদমকে
ছিন্নভিন্ন করে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে একটা এলাকাকে বিরানভূমিতে পরিনত করে দেয় তার
জ্বলন্ত উদাহারণ আমি প্রত্যক্ষ করলাম। হাজার হাজার গৃহহারা মানুষ খোলা আকাশের
নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যয়জনিত কারণে লোকজন নানা রোগে
আক্রান্ত হচ্ছে। ওষুধের জন্য তাদের হাহাকার যেকোন পাষাণ হৃদয়ের মানুষকেও কোমল করে
দেবে। সন্তানহারা বৃদ্ধার অবারিত কান্নার স্রোত আমাদেরও আঁখিতে এনেছিল বাঁধভাঙা
অশ্রুর ঢল। অসহায় মানুষের বিয়োগাত্মক স্মৃতিচারণ আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছিল
বারবার। অর্ধোন্মাদ হয়ে কেউবা অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। খালের পাশে পড়ে আছে নববধুর
লাশ। শীরের তার জড়িয়ে আছে লাল বেনারসি। যাত্রা করেছিল যে সুন্দর আগামীর দিকে।
প্রকৃতির নির্মম খেয়াল তার আজন্ম লালিত স্বপ্নকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। আর তাই তার
ঠোঁটে লেগে ছিল মলিন হাসি। যেন সে প্রকৃতির কাছে অভিযোগ করছে, "কী আপরাধে আমারে
দিয়েছ এই নির্মম শাস্তি?" অবোধ শিশু "মা, মা" করে চিৎকার করছে। তার মা যে অসীমের
পথে যাত্রা করেছে তা বোঝার বয়সও তার হয়নি।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী এ অঞ্চলে খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ
মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে, বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে দিনাতিপাত করছে। রিলিফ দিতে
গিয়ে অনেক এলাকায় দেখা যায়, মহিলারা চটের বস্তা দিয়ে আব্রু ঢাকার প্রাণান্তকর
চেষ্টা করছে। নিজেকে তাদের জায়গায় কল্পনা করতে গিয়ে শিউরে উঠেছিলাম বারবার।
প্রকৃতপক্ষে এ অঞ্চলের মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তাদের হৃদয়ে দুঃসহ স্মৃতি
হয়ে এ কালরাত্রি অম্লান থাকবে।
প্রতিবেদক
সৈয়দ মোহাম্মদ আসিফ।
এটা অনেক বড় 😒😒😶😔🤧🤧🤧🤧
ReplyDeleteOnek filmy type 😐
ReplyDelete