↬ বাংলা ছোটগল্প
↬ আধুনিক বাংলা ছোটগল্প
↬ বাংলা ছোটগল্পের গতিপ্রকৃতি
↬ স্বাধীনতা - উত্তর বাংলা ছোটগল্প
ছোটপ্রাণ ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা
নিতান্তই সহজ সরল
সহস্র বিস্মৃত রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দুচারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।
---রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ভূমিকা : গল্প শোনা বা গল্প বলা মানবমনের এক আদিম ইচ্ছা। গুহামানব মাটির বুকে বা পাথরের গায়ে আঁকিবুকি কেটে গল্পের অস্ফুট কাঠামো তৈরি করে তৃপ্তি পেত। সামন্ততান্ত্রিক সম্প্রদায়ের বল্গাহীন জীবনস্রোতে রুচির পিপাসা মেটাতে আগেকার দিনে গল্প তৈরি করা হতো। তখন সেটা ছিল নিছকই খেয়াল। তারপর অবস্থার পরিবর্তন হলো। গল্প শুধু মানুষের বিনোদনের হাতিয়ার হয়ে রইল না। গল্পের মধ্যে মানুষ খুঁজে পেল তার জীবনকে। ইউরোপের প্রায় সমকালেই ছোটগল্পের আসর বসেছে বাংলা সাহিত্যে। তবে সার্থক বাংলা ছোটগল্পের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সমকাল পর্যন্ত। বাংলাদেশের ছোটগল্পের ইতিহাস সময়ের স্বল্পতার মধ্যে সমৃদ্ধির পর্যায়ে অগ্রসর হচ্ছে।
ছোটগল্পের সংজ্ঞা : আধুনিক গল্পলেখক বিষয়বস্তু, চরিত্রসৃষ্টি, কথোপকথন, পরিবেশ সৃষ্টি, বাণীভঙ্গি প্রভৃতি প্রত্যেকটি বিষয় সম্বন্ধে একান্তভাবে আত্মসচেতন। গল্প আকৃতিতে ছোট হলেই ছোটগল্প হয় না। আকৃতিগত দিক ছাড়াও প্রকৃতিগত এবং মর্মগত অনেক বিভিন্নতা একে উপন্যাস হতে পৃথক শ্রেণিভুক্ত করেছে। E. A. Poe (১৮০৯-৪৯) বলেন, যে গল্প অর্ধ হতে এক বা দু ঘণ্টার মধ্যে এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে।' H. G. Wells বলেন, “ ছোটগল্প ১০ হতে ৫০ মিনিটের মধ্যে শেষ হওয়া বাঞ্ছনীয়।” আসল কথা এই যে, ছোটগল্প আকারে ছোট হবে বলে এতে জীবনের পূর্ণাবয়ব আলোচনা থাকতে পারে না। জীবনের খণ্ডাংশকে লেখক যখন রসনিবিড় করে ফুটাতে পারেন, তখনই এর সার্থকতা। জীবনের কোনাে একটি বিশেষ মুহূর্ত কোনো বিশেষ পরিবেশের মধ্যে কেমনভাবে লেখকের কাছে প্রত্যক্ষ হয়েছে, এটি তারই রূপায়ণ। ছোটগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে শ্রীশচন্দ্র দাশ বলেন,
ছোটগল্পের আরম্ভ ও উপসংহার নাটকীয় হওয়া চাই। সত্য কথা বলিতে কি, কোথায় আরম্ভ হইবে এবং কোথায় সমাপ্তির রেখা টানিতে হইবে, এই শিল্পদৃষ্টি যাহার নাই, তাহার পক্ষে ছোটগল্প লেখা লাঞ্ছনা বই কিছুই নহে।
আধুনিক বাংলা ছোটগল্প : প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তবর্তী সময়ে বাংলা ছোটগল্পের এক নতুন প্রবাহ দেখা দিয়েছিল। একদিকে রাশিয়ার বিপ্লব ও অন্যদিকে ধনতন্ত্রী শক্তির রাজ্যগ্রাসী লিপ্সা -এ দুয়ের মধ্যে পড়ে বাঙালি তরুণ হতাশা ও অবিশ্বাসে যেমন দিশাহারা হয়েছে, তেমনি সমাজবাদের আদর্শে তারা অনেকে নতুন পথও খুঁজে পেয়েছে। একই সঙ্গে ফ্রয়েড, ইয়ুং প্রভৃতি দার্শনিকদের অভিনব জীবনদর্শন আমাদের আজন্ম লালিত সংস্কারগুলোকে ভেঙে দিতে চেয়েছে। জন্ম নিল কল্লোলগোষ্ঠী। কল্লোল পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই পুষ্ট হয়েছিল এ শিল্পী সমাবেশ। কল্লোল, কালি-কলম, উত্তরা'র পাতায় তৎকালীন সামাজিক অবক্ষয় স্পষ্ট হয়ে উঠল। এঁদের প্রয়াসে বাংলা সাহিত্যে নতুন দিগন্ত আবিষ্কৃত হলো। এ দলে ছিলেন বুদ্ধদেব বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাঁদের অন্যতম উপলব্ধি আরেক দিগন্তের সন্ধান দিল এসময়ের আরও কিছু কথাশিল্পীদের মধ্যে, তাদের মধ্যে আছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধ সান্যাল, সরোজ রায়চৌধুরী প্রমুখ। ব্যঙ্গবিদ্রুপের জ্বালাও অনুসৃত হলো পরশুরাম, বনফুলের রচনায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাংলা ছোটগল্পে পালাবদল ঘটাল। বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা, বিবেকহীনতা সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের মূল্যবোধকে বিপর্যস্ত করল, আর তার বলি হলো সামাজিক মানস। সাহিত্যিক শিল্পীদের মন দুঃখদীর্ণ পৃথিবীর নগ্নরূপ দেখে শিউরে উঠল; মুক্তি পেল বাংলা গল্পের অভিনব আধুনিক ধারা। এ প্রবাহের একপ্রান্তে আছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সুবোধ ঘোষ, সমরেশ বসু, সতীনাথ ভাদুড়ী, বিমল কর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ; অন্যপ্রান্তে আছেন আবুল ফজল, শওকত ওসমান, শাহেদ আলী, আবু রুশদ, হাসান আজিজুল হক, আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রমুখ শক্তিমান লেখকগােষ্ঠী। বস্তুত আধুনিক ছোটগল্প যতটা না জীবননির্ভর, তার চেয়ে বেশি শিল্পসচেতন। এ সমাজে ব্যথাবেদনা, দুঃসহ আত্মদহন আমাদের এমন এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে, যেখানে আমরা কোধে ফেটে পড়তে পারি, পারি সৃষ্টির বীণায় নতুন জীবনের সুর ফুটিয়ে তুলতে।
বাংলাদেশের ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য : বাংলাদেশের জীবনের পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে গল্পের বিষয়েও এসেছে বৈচিত্র্য। একদিন বাংলার পল্পিপ্রকৃতি আর মানুষ গল্পে স্থান পেয়েছে। পরবর্তীকালে নগরমুখী মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দবেদনা হয়েছে ছোটগল্পের উপজীব্য। কৃষিভিত্তিক জীবনাচরণে এসেছে শিল্পের প্রভাব। আধুনিক জীবনের নানা সমস্যা এখন চারদিকে প্রকট। ছোটগল্প এসব কোনোকিছু উপেক্ষা করতে পারে না বলে বাংলাদেশের ছোটগল্পের বিষয় বৈচিত্র্য সহজেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিষয় নির্বাচনে এখানকার গল্পকারগণ ব্যতিক্রমধর্মিতার পরিচয় দিয়েছেন। শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত সমাজের চিত্র ছোটগল্পে এখন সহজলভ্য। জীবনঘনিষ্ঠতার জন্য এ বৈশিষ্ট্য প্রকাশমান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ফলে জীবনে ও সমাজে যে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল, তা বাংলাদেশের গল্পকারগণ উপেক্ষা করতে পারে নি। তাই এখানকার কিছু কিছু গল্পে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র রূপায়িত হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের প্রতিফলন এখানকার ছোটগল্পে সবচেয়ে বেশি। নগরকেন্দ্রিক জীবনের বিভিন্ন দিকও এখানকার গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে।
বাংলাদেশের ছোটগল্প : বাংলাদেশের ছোটগল্প এক স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী। এখানকার প্রকৃতি ও মানুষ ছোটগল্পে খুব সুন্দরভাবে বিধৃত হয়েছে। জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দবেদনা নিয়েই এখানকার ছোটগল্প। এদেশের ছোটগল্পে একদিকে যেমন গ্রামীণ জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি আছে শহরকেন্দ্রিক জীবনের চিত্র। বাংলাদেশের ছোটগল্পকারদের মধ্যে প্রথমেই যাদের নাম করতে হয়, তাঁরা হলেন আবুল মনসুর আহমদ, মবিনউদ্দিন আহমদ, শওকত ওসমান, আবু রুশদ, শাহেদ আলী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল গাফফার চৌধুরী, শহীদ আখন্দ, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, আবু ইসহাক, শওকত আলী, হাসান আজিজুল হক এবং আরও অনেকে। আবুল মনসুর আহমদ হাস্যরসের গল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর কৃতিত্ব ব্যঙ্গবিদ্রুপাত্মক গল্পরচনাকারী হিসেবে। আয়না’, ফুড কনফারেন্স', আসমানী পর্দা' প্রভৃতি তাঁর গল্পগ্রন্থ।
প্রবীণ গল্পকারদের মধ্যে আরও একজন হলেন মাহবুব-উল-আলম। তাঁর গল্পগ্রন্থের নাম তাজিয়া’ ও ‘পঞঅন্ন'। আবুল ফজল একজন বিশিষ্ট গল্পকার। মাটির পৃথিবী', 'আয়না', মৃতের আত্মহত্যা’ ও ‘শ্রেষ্ঠগল্প তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। আবু জাফর শামসুদ্দিনের গল্পগ্রন্থের নাম জীবন, ‘শেষ রাত্রির তারা’, ‘একজোড়া প্যান্ট ও অন্যান্য রাজেন ঠাকুরের তীর্থযাত্রা’, স্বনির্বাচিত গল্প’, ‘শ্রেষ্ঠগল্প’ ‘নেংড়ী’ ইত্যাদি। মবিনউদ্দিন আহমদ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ভাঙ্গা বন্দর’ ও ‘হােসেন বাড়ীর বৌ’ গল্পগ্রন্থ লিখে। মুসলমান সমাজ জীবনের কথা তার গল্পে রূপায়িত হয়েছে। শওকত ওসমান একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী। ছোটগল্পের ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। তাঁর গল্পগ্রন্থগুলোর মধ্যে জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প’, সাবেক কাহিনী’, ‘পিজরাপােল’, ‘ওটেন সাহেবের বাংলো’, ‘প্রস্তর ফলক’, ‘ডিগবাজী’, উপলক্ষ’, ‘নেত্রপথ, জন্ম যদি তব বঙ্গে', এবং তিন মির্জা, ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আবু রুশদ খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রথম যৌবন’, শাড়ী বাড়ী গাড়ী, রাজধানীতে ঝড়’, ‘মহেন্দ্র মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করে। আধুনিক সমাজের চিত্র তাঁর গল্পে প্রাণবন্ত রূপ লাভ করেছে।
মিরজা আবদুল হাই এ সময়ের আরও একজন শক্তিশালী গল্পকার। তাঁর গ্রন্থের নাম ছায়া প্রচ্ছায়া ও বিস্ফোরণ। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ বাংলা কথাসাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নাম। তাঁর উপন্যাসের মতো ছোটগল্পেও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ লক্ষ করা যায়। ‘নয়নচারা’ এবং ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’ তাঁর বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ। দুটি গ্রন্থের গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। সরদার জয়েনউদ্দীন নয়ানটুলি’, ‘বীর কণ্ঠার বিয়ে’, ‘খরস্রোতা’, ‘অষ্টপ্রহর’, ‘বেলা ব্যানার্জির প্রেম ইত্যাদি গল্পগ্রন্থের রচয়িতা। আবু ইসহাক প্রধানত ঔপন্যাসিক। সূর্য দীঘল বাড়ী' উপন্যাসের জন্য তিনি বিখ্যাত। ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও তাঁর দক্ষতা কম নয়। তিনি বাস্তবধর্মী লেখক। মহাপতঙ্গ’ ও ‘হারেম’ আবু ইসহাকের গল্পগ্রন্থ। আবদুশ শাকুর ব্যঙ্গবিদ্রুপাত্মক গল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর গ্রন্থের নাম ক্ষীয়মান’, ‘সরসগল্প’, ক্রাইসিস’, ‘ধস’, ‘এপিটাফ', 'বিচলিত প্রার্থনা' প্রভৃতি। তার গল্পে সমকালীন জীবনের বৈশিষ্ট্যর প্রতিফলন লক্ষণীয়। এ সময়ের আরও কয়েকজন গল্পকার আতোয়ার রহমান, রাজিয়া মাহবুব, লায়লা সামাদ, মিন্নাত আলী, হেলেনা খান ও ইসহাক চাখারী।
শামসুদ্দিন আবুল কালাম কথাসাহিত্যে বিশিষ্টতার পরিচয় দিয়েছেন। তার অধিকাংশ ছোটগল্প গ্রামীণ পটভূমিতে রচিত এবং তাতে লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়েছে। প্রকৃতির প্রভাবও তার গল্পে লক্ষ করা যায়। পথ জানা নেই’, ‘ঢেউ’, ‘দুই হৃদয়ের তীর’, ‘অনেক দিনের আশা’, শাহেরা বানু’, ‘পুঁই ডালিমের কাব্য’, ‘মজা গাঙের গান’ প্রভৃতি শামসুদ্দিন আবুল কালামের গল্পগ্রন্থ। এসময়ের অন্যান্য গল্পকারদের মধ্যে আশরাফ সিদ্দিকী, নাজমুল আলম, আহমদ মীর বিশিষ্টতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলা কথাসাহিত্যে আলাউদ্দিন আল আজাদ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি সমাজ সচেতন গল্পকার। তাঁর কিছু কিছু গল্পে ফ্রয়েডীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান আলাউদ্দিন আল আজাদের গল্প গ্রন্থের মধ্যে ‘জেগে আছি’, ‘ধানকন্যা’, ‘মৃগনাভি’, ‘অন্ধকার সিড়ি’, ‘উজান তরঙ্গে’, ‘যখন সৈকত’, ‘আমার রক্ত’, ‘স্বপ্ন আমার’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসময়ের অন্যান্য গল্পকারদের মধ্যে সুনাম করেছেন শহীদ সাবের, জহির রায়হান, মুর্তজা বশীর, সাইয়িত আতীকুল্লাহ, হাসনাত আবদুল হাই, আবদুল গাফফার চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ আখন্দ, হুমায়ুন কাদির, হাসান হাফিজুর রহমান, ফজল শাহাবুদ্দীন ও মকবুলা মনজুর।
হাসান আজিজুল হক নিরীক্ষাধর্মী গল্পকার। ছোটগল্পের জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর গল্পে নতুন ঢং আছে। তাঁর গ্রন্থগুলোর মধ্যে সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, জীবন ঘষে আগুন’, নামহীন গােত্রহীন', আমরা অপেক্ষা করছি’, ‘পাতালে হাসপাতালে প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বশীর আল হেলাল কৃতিত্ব দেখিয়েছেন স্বপ্নের কুশীলব’, ‘প্রথম কৃষ্ণচূড়া, বিপরীত মানুষ এবং ক্ষুধার দেশের রাজা’ গল্পগ্রন্থ লিখে। জ্যোতি প্রকাশ দত্তের গল্পগ্রন্থের নাম দুর্বিনীত কাল’ ও বহেনা সুবাতাস। রিজিয়া রহমানের ‘অগ্নিস্বাক্ষর' সুপাঠ্য গল্পগ্রন্থ। রাহাত খান, রশীদ হায়দার, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শক্তিশালী গল্পকার। শওকত আলী বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। উপন্যাস ও ছোটগল্পে তার কৃতিত্ব সমানে সমান। মানবতার প্রতি অকৃত্রিম সহানুভূতি, গভীর অন্তদৃষ্টি, মনোহর প্রকাশভঙ্গি, গতিশীল ভাষা তাঁর রচনার বৈশিষ্ট্য। প্রকরণের দিক থেকেও নতুনত্ব আছে তাঁর গল্পে। উন্মুল বাসনা', 'লেলিহান সাধ', শুন হে লখিন্দর’ ‘তিন রকমের চেনা জানা প্রভৃতি শওকত আলীর বিশিষ্ট গ্রন্থ। এসময়ের অন্যান্য গল্পকারদের মধ্যে আছেন বিপ্রদাস বড়ুয়া, আবদুল মান্নান সৈয়দ, সেলিনা হোসেন, আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন, বুলবুল চৌধুরী, কায়েস আহমেদ প্রমুখ। তাঁরা সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এরপরও আরও বেশ কজন কথাসাহিত্যিক আছেন, ছোটগল্পের ক্ষেত্রে তাদের অবদান কম নয়। তারা হলেন মঞ্জ সরকার, ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের, ঝর্ণা রহমান ও ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ।
উপসংহার : বাংলাদেশের ছোটগল্প এখন আর একেবারে পিছিয়ে নেই। কয়েক জন প্রতিভাধর গল্পকারের আবির্ভাবের ফলে সাহিত্যের এ শাখাটি যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের ছোটগল্প খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিকাশ লাভ করেছে। তাই ছোটগল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলে বিবেচিত হতে পারে।