তোমার দেখা একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা করো।
সমস্যা জর্জরিত হাতিরচর হাসপাতাল
নিজস্ব প্রতিনিধি: হাতিরচর থেকে, ২৫জুন, ২০১৮ : নোয়াখালী জেলার হাতিরচর
থানা সদর হাসপাতালটি হাজারো সমস্যা নিয়ে নিভু নিভু প্রদীপের মতো সময় অতিবাহিত
করছে। অথচ হাতিরচরের হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র এ
হাসপাতাল। দিন আনা দিন খাওয়া হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা হয় এ হাসপাতালে। প্রতি
বছর কমপক্ষে ১লাখ থেকে ১লাখ ২০ হাজার দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা হয় এ হাসপাতালের
আউটডোরে। প্রতিদিন ভোর থেকেই হাজার হাজার মানুষ লাইন ধরে প্রতীক্ষা করে একটু ভালো
চিকিৎসার জন্য। এ হাসপাতালে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক রোগো ভর্তি হয়।
বহির্বিভাগের রোগীরা অভিযোগ করেছে, সারাদিন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও শেষ পর্যন্ত
তাদের চিকিৎসা না পেয়েই ঘরে ফিরতে হয়। অনেক প্রতীক্ষার অবসান ঘটার পর ছোট একটি
ব্যবস্থাপত্র পাওয়া গেলেও ওষুধ জোটে না। দরিদ্র নিরন্ন মানুষ যেখানে তিন বেলা
খেতে পারে না তাদের পক্ষে ওষুধ কিনে খাওয়া সম্ভব নয় বলেই তারা হাসপাতালের
শরণাপন্ন হয়। হাসপাতালটি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে অনেক সমস্যা হতে
বিদ্যমান। ওয়ার্ডে কম, থুথু, পানের পিক, ওষুধ ব্যবহারের পর খালি শিশি, সিরিঞ্জ
ইত্যাদি ময়লার স্তূপ হয়ে আছে। ড্রেনেজের সঙ্গে সুয়ারেজ লাইনের সংযোগ ঘটায় ময়লা
আবর্জনা একাকার। কলেরা ওয়ার্ডের পাশে ডাস্টবিন, যা থেকে ২৪ ঘন্টাই দুর্গন্ধ
ছড়াচ্ছে। ময়লা আবর্জনার উপর মশা-মাছি বসে তা রোগীর গায়ে বসে রোগ ছড়াচ্ছে। ফলে
রোগীরা রোগ সারাতে এসে নতুন করে রোগ বাঁধিয়ে নিচ্ছে। সারা হাসপাতালে পানির তীব্র
সংকট। শৌচাগারগুলো অপরিচ্ছন্ন। বেডের চাঁদর ময়লা ও নোংরা, তেলচিটে দাগ পড়ে
আছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো ডিউটি রুম নেই। ডাক্তাদের বসার কোনো জায়গা নেই।
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমে আধুনিক কোনো মেশিন নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব।
প্যাথলজি বিভাগ যন্ত্রশূন্য। এক্স-রে মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একটি মাত্র
অ্যাম্বুলেন্স তা দু একদিন পর পর নষ্ট হয়। অপারেশন থিয়েটার প্রয়োজনীয়
যন্ত্রপাতি নেই, যা আছে তাও অকেজো। ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করা যায় না।
হাসপাতালে কর্মচারী অভাব প্রায় ৫০%। সে কয়েকজন আছেন তাদের মধ্যে ৯০% কর্মচারী
কোনো আবাসিক সুবিধা নেই। নার্সদের থাকার কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা
নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
১২৫ বেডের এ হাসপাতালে ৫টি ওয়ার্ড আছে। এখানে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশুরোগ ও
কলেরা বিভাগ আছে। কিন্তু প্রতিটি বিভাগের অবস্থায় শোচনীয়। প্রতিটি যন্ত্রপাতি
দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট। কোনো টেকনিশিয়ান নেই।
হাসপাতাল ১০ জন ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ৪ জন উপস্থিত থাকেন। ২জন কনসালট্যান্ট
প্রায় সময়ই অনুপস্থিত থাকেন। ৪ জন ডাক্তারই ইনডোর আউটডোরসহ সব দিক দেখাশোনা করেন।
সর্বোপরি হাসপাতালটি একটি আধুনিক হাসপাতালের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে উঠলেও সে
বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কোনো কাজ হচ্ছে না। এমতাবস্থায় উপর্যুক্ত সমস্যা সমাধানের
কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা একই সাথে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি জন্য অত্যাধুনিক
যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা উচিত। ১২৫ শয্যাকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন।
নতুবা দরিদ্র মানুষ সুচিকিৎসার অভাবে মারা যাবে। ফলে জনমনে অসন্তোষ দেখা
দেবে।
জনস্বার্থে হাসপাতালটি উন্নয়নকল্পে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সর্বাত্নক ব্যবস্থা
গ্রহন করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রতিবেদক
মনজুর এলাহী।