ভূমিকা : আমরা যাতে চড়ে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় যাতায়াত ও মালপত্র বহন করি, তাকে যানহন বলে। প্রাচীনকালে যন্ত্রশক্তি যখন করতলগত মানুষের হয়নি তখন মানুষ পায়ে হেঁটে বা পশুর সাহায্যে স্থানান্তরে যাতায়াত করত। বর্তমান যুগ যান্ত্রিক যুগ বা গতির যুগ। তাই দেশের উন্নতি অনেকখানি নির্ভর করে সুষ্ঠু যানবাহন ব্যবস্থার উপর।
প্রকারভেদ : যানবাহন তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এগুলো হলো- স্থলযান, নৌযান ও আকাশযান।স্থলযান আবার দু প্রকারের, যথা-সড়ক ও রেল।
স্থলযান : ঊনবিংশ শতকে বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে যানবাহনে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আধুনিক স্থলযানের মধ্যে রেলগাড়ি, মোটর, বাস, মিনিবাস, স্পুটার, ট্রাম, মোটর সাইকেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কাজেই যানবাহন ব্যবস্থা বিজ্ঞানের এক বিরাট অবদান। বাংলাদেশ প্রায় ১,৭০,০০০কিলোমিটার সড়ক পথ রয়েছে। বেশি ভাগ সড়কই কাঁচা। অবশ্য প্রধান প্রধান সড়ক পথ পাকা। সড়কপথে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করা যায়। বাংলাদেশে প্রায় ২৭০৬.০১ কিলোমিটার রেলপথ আছে। আমাদের দেশে রেলপথ তিন প্রকায়- ব্রডগেজ, মিটরগেজও ন্যারোগেজ। ঈশ্বরদী, নাটোর, সাস্তাহার, সৈয়দপুর প্রকৃতি লাইন ব্রডগেজ দেশের বাকি রেলপথ মিটার গেজ এবং খুলনায় সামান্য ন্যারোগেজ রেলপথ আছে। আমাদের দেশে রেল যোগাযোগ আজও তেমন সম্প্রসারিত হয়নি।
নৌযান : আমাদের দেশ নদীমাতৃক নদীপথে দেশের প্রায় সকল স্থানে যাতায়াত করা যায়। নৌখানে চলাফেরা করা আরামদায়ক এবং খরচও কম। আমাদের অভ্যন্তরীণ নৌযানের মধ্যে স্টিমার, লঞ্চ, বজরা, পানসি, ডিঙ্গি, কার্গো, কোষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলোর সাহায্যে যাতায়াত ছাড়া ধান, পাট, তরিতরকারি প্রভৃতি পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করা হয়। চট্টগ্রামের নদীতে সাম্পান নামক এক প্রকারের গোলাকার নৌকা চলাচল করে। কিছুকাল আগে ‘হোতার ক্লাফট' নামক এক প্রকার অতি দ্রুতগামী জলযান বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। সমুদ্রপথে যাত্রীবাহী জাহাজ মালবাহী জাহাজ, তেলবাহী জাহাজ, সি-ট্রাক ইত্যাদি চলাচল করে।
আকাশযান : আজকাল দ্রুত যাতায়াত ও মাল পরিবহনের জন্য আকাশযান ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন প্রকার আকাশযানের মধ্যে ফোকার ট্রাইডল, বোয়িং ৭০৭, ডিসি ১০ সুপারসনিক, কনকর্ড বেস্টার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া নানা ধরনের ছেটপ্লেন তো আছেই। গ্লোবটার একবারে প্রায় দুই হাজার টন মালামাল পরিবহন করতে পারে। এগুলোর কোন কোনটির বেগ প্রতি ঘণ্টায় তিনশ থেকে পনেরশ মাইলের মত। এটি অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। বিমানের জন্য বিমান বন্দর প্রয়োজন। বিমানের সাহায্যে বিদেশে সংবাদপত্র ও ডাক আদান-প্রদান করা হয়। ঢাকার কুর্মিটোলায় নতুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর স্থাপিত হয়েছে। এর নাম ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর’। ঢাকা থেকে বিমানে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই যাওয়া যায়। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে হেলিকপ্টারযোগে দেশের যে কোন জায়গায় যাতায়াত করা যায়।
উপকারিতা ও অপকারিতা : খানবাহনের দ্রুত উন্নতির ফলে আমাদের যাতায়াত ও মাল পরিবহনের অনেক সুবিধা হয়েছে। অতীতে যানবাহনের প্রচলন সীমাবদ্ধ থাকায় দেশগুলো ছিল পর থেকে বিচ্ছিন্ন। পরিবেশ দূষণ এবং দুর্ঘটনা- এ দুটি হচ্ছে যানবাহনের অপকারিতার দিক।
উপসংহার : দেশের উন্নতি সাধনের জন্য যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য। দেশ-বিদেশে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও যোগাযোগ রক্ষার জন্য যানবাহন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে যানবাহনগুলো উন্নতর হচ্ছে। তবুও আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য ধীরগতি যানবাহন খুবই উপযোগী। আমদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় যানবাহন খুব অল্প। এজন্য খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অতএব, দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য আমাদের যানবাহনের উন্নতি সাধন করতে হবে।